ঝালকাঠিতে তেলবাহী ট্যাংকার বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজ চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কোস্ট গার্ড ডুবুরিরা সোমবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে প্রথমে দুজনের এবং পরে দুপুরে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করে।
যাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে- তারা হলেন, জাহাজের গ্রিজারম্যান আব্দুস সালাম হৃদয়, মাস্টার ইনচার্জ রুহুল আমীন খান, সুপারভাইজার মাসুদুর রহমান বেলাল এবং ড্রাইভার সারোয়ার হোসেন।
কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট শাফায়েত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণে জাহাজের ভেঙ্গে পড়া অংশ থেকেই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে রোববার (২ জুলাই) জাহাজটির ইঞ্জিন রুম থেকে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আর কেউ নিখোঁজ নেই।
এদিকে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত তেলবাহী জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ থেকে ১১ লাখ লিটার তেলের মধ্যে চার লাখ লিটার পেট্রোল ও ডিজেল সরিয়ে ডিপোতে নেওয়া হয়েছে।
শনিবার দুর্ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজদের খোঁজে স্বজনরা সুগন্ধা নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছিলেন। মরদেহ উদ্ধারের পর স্বজনদের আহাজারী আর কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। মরদেহগুলো অনেকটাই বিকৃত হয়ে গেছে। স্বজনরা চুল, দাড়ি ও শরীরের গড়ন দেখে তাদের শনাক্ত করেন।
লেফটেন্যান্ট শাফায়েত হোসেন বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান সমাপ্ত করা হবে।
এদিকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে তারা কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি ঝালকাঠি শহরের সুগন্ধা নদীর তীরে তেলের ডিপোতে তেল খালাস করার জন্য ১১ লাখ লিটার পেট্রোল ও ডিজেল নিয়ে আসে।
জাহাজটি নোঙর করা অবস্থায় নদীর অপর প্রান্তে শনিবার (১ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগে যায়। আগুনে দগ্ধ হন জাহাজের শ্রমিক শাকিল (৩৫), ফরিদুল আলম (৫০), ইকবাল হোসেন (২৭) ও মাইনুল ইসলাম হৃদয় (২৯)। তারা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার সাগর নন্দিনী-২ ট্যাংকারটি ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর পাড়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানির জন্য জ্বালানি তেল নিয়ে আসে। ৯ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে সেটি নোঙ্গর করা ছিল রাজাপুর গ্রামের কাছে। শনিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে হঠাৎ করেই ট্যাংকারটিতে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে জাহাজের পাঁচজন দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঝালকাঠি জেলা পুলিশ, জেলা প্রশাসক ও জাহাজের উদ্ধার হওয়া বাবুর্চির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জাহাজটিতে মোট নয়জন ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন দগ্ধ হয়েছেন, নিখোঁজ ছিলেন চারজন।
বিআইডব্লিউটিএ জানায়, বিস্ফোরণের পর সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটির একটি অংশ উড়ে গিয়ে সুগন্ধা নদীতে পড়েছিল। সোমবার সকাল থেকে নদী থেকে জাহাজটির অংশ উদ্ধারে কাজ শুরু করে বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজ ’নির্ভিক’।
এ বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে কোম্পানির ব্যবস্থাপককে (অপারেশন) প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড।