নারায়ণগঞ্জে সেচ প্রকল্পে চাঁদাবাজি, বিএনপির দুই নেতাকে পানিতে চুবিয়েছে গ্রামবাসী

নারায়ণগঞ্জ বন্দরে কৃষি জমির সেচ প্রকল্পে চাঁদাবাজি করার সময় দুই ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতিকে পানিতে চুবিয়েছে বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার পিচ কামতাল এলকার জহিদ্দার বিলে এই ঘটনা ঘটে। এসময় চাঁদাবাজদের হামলায় এক মহিলা মেম্বারসহ ৫ জন রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। গনপিটুনির শিকার দুই বিএনপি নেতারা হলেন, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তারা মিয়া ও ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদ খন্দকার।

স্থানীয়রা জানান, বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের বাজুরবাগ এলাকার আমান উল্লাহ দীর্ঘ দিন ধরে জহিদ্দার বিলে ইরি ধান জমিতে পানি সেচ করে আসছিল। এরই মধ্যে বালিগাঁও এলাকার হযরত আলী মিয়ার ছেলে যুবদল নেতা পরিচয় দানকারী পাপ্পু ও পিচকামতাল এলাকার মৃত সায়েদ আলী মিয়ার ছেলে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তারা মিয়া সহ ১০ থেকে ১২ জন আমান উল্লাহর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন।

এরই ধারাবাহিকতায় রোববার আমান উল্লাহ চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে পাপ্পু, বিএনপি নেতা তারা মিয়া, ফারুক, খালেক ও আব্দু রহিম, হযরত আলী, ইউসুফ ও ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি জাহিদ খন্দকার সহ অজ্ঞাত নামা ২০ থেকে ২৫ জন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমান উল্লাহর উপর হামলা করে।

এসময় আমান উল্লাহ প্রাণ রক্ষার্থে ডাক চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের উপর হামলা চালায়। এ হামলায় এক মহিলা মেম্বার লাভলী বেগম সহ কমপক্ষে ৫ জন গ্রামবাসী আহত হন। আহতরা হলেন-সেচ প্রকল্পের মালিক আমান উল্লাহ (৪০) ও তার স্ত্রী মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার লাভলী বেগম (৩৬) ছেলে সোহান (২১), আহাদ আলী (৫৫) ও ছেলে বাহাউদ্দীন (৩৫)।

ধামগড় ইউনিয়নের নারী সদস্য লাভলী বেগম বলেন, বিগত দিনে তুফানে সেচ প্রকল্প এলাকায় খুঁটি ভেঙ্গে গিয়ে ছিল। তো সেটা ঠিক করতে হবে। আমান উল্লাহ এটা ঠিক করার ব্যবস্থা করেছে। এরমধ্যে তারা এসে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। আমি এই এলাকায় মেম্বার আমি সেখানে গিয়েছি। তারা আমাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাদেরকে প্রতিরোধ করেছে, তারা মিয়া, ফারুক, পাপ্পুকে পানিতে চুবিয়েছে।
তবে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তারা মিয়া জানান, আমান উল্লাহ’র সেচ কাজে বাধা দেয় গ্রামবাসী। এতে গ্রামবাসীকে সমর্থন জানিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় তারা মিয়া ও পাশের ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদ খন্দকার। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

তিনি বলেন, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এই এলাকার নদীর তীরের মাটি কেটে বিক্রি করে আমান উল্লাহ গং। এবার যাতে সেটি না পারে সেজন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পুলিশ নিয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে বাধা দেই। তখন আমান উল্লাহ’র সহযোগি মুছাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি বাহাউদ্দিন পুলিশের সামনেই আমাকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। ওই সময় আমি পাশের জলাশয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণে রক্ষা পায়।

বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, জহিদ্দার বিলে স্থানীয় মুছাপুর ইউনিয়নের বাজুরবাগ এলাকার আমান উল্লাহ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে পাম্পের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে ইরি প্রকল্পে পানি সরবরাহ করেন। এতে পাম্পের পানি যে স্থানে পড়ে সেখানে একটি গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়। এতে করে নদীর তীরবর্তী জমি গুলোতে বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এ নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। বিষয়টি গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে পুলিশকে আগেই জানানো হয়েছিল। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছি।