বিএনপি বৃহস্পতিবার নতুন কর্মসূচি দেবে

সাত জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে বৃহস্পতিবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানিয়েছে বিএনপি ও তাদের সাথে আন্দোলন করা দলগুলো। তাদের অভিযোগ, র‌্যাব-বিজিবি দিয়ে জনগণকে ভয় দেখিয়ে কেন্দ্রে নেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলের প্রকল্প জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে বলেও দাবি করেছেন বিএনপি ও তাদের সঙ্গে থাকা দলগুলোর নেতারা। বুধবার দুপুর সাড়ে এগারোটায় রাজধানীর ফার্মগেট আনন্দ সিনেমা সামনে মিছিলের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। মিছিল শুরুর পরই পাশের একটি নির্বাচনী ক্যাম্প থেকে শুরু হয় উচ্চ শব্দে ভোটের প্রচার। যদিও নির্বাচনী আচরণবিধি মতে দুপুর দু’টার আগে মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ। অনুষ্ঠানের বিষয়ে আগেই পুলিশকে জানানো হলেও তারা তা আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা অভিযোগ করেন, বিরোধী দলকে দমন করে তামাশার নির্বাচন করছে সরকার। কোনো বাধাই বিরোধী দলকে আন্দোলন থেকে সরাতে পারবে না। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, জনগণ তামাশার নির্বাচন এমনভাবে বর্জন করেছে যার নজির দেশের ইতিহাসে নেই। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা মারামারি খুনোখুনি করে বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। মিছিলের আগে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন। সমাবেশে নেতারা বলেন, ভোটকেন্দ্রে লোক আনার জন্য সরকার এতটাই মরিয়া যে, তারা হাইকোর্টে রিট করেছে ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য। যারা সরকারি সুবিধা ভোগ করেন তাদের ভোট দিতে বাধ্য করার জন্য আদালতে এ রিট আবেদন করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মঈন খান ব‌লে‌ন, যেদিন মনোনয়ন দাখিল করা হয়েছে সেই দিনই তো নির্বাচন হয়ে গেছে। তাই বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ কোন গুরুত্ব বহন করবে না। দেশের মানুষ নির্বাচন বর্জন করেছে কারণ এদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না। জনগণের ইচ্ছার কোনো প্রতিফলন হয় না। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা আরও বলেন, জাতীয় পার্টিকে রাজনৈতিকভাবে ভিক্ষুকে পরিণত করে সহযোগী দলে ঢুকিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের দাসে পরিণত হওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা টাকা-পয়সার ভাগবাটোয়ারা না পেয়ে গণহারে সরে যাচ্ছে সাজানো নির্বাচন থেকে। অন্যদিকে, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে মিছিল ও সমাবেশ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল। মিছিল ও সমা‌বেশ শে‌ষে তোপখানা রোডসহ আশপাশের এলাকায় লিফলেট বিতরণ ক‌রা হয়।
তি‌নি ব‌লেন, আওয়ামী লী‌গের উদ্দেশ্য কীভাবে দিনের ভোট রাতে করবে অথবা ভুয়া সাজানো একটি ভোট করবে এবং সেই নির্বাচনের মাধ্যমে ভুয়া একটি ফলাফল তৈরি করে তাদের ইচ্ছামতো একটি সরকার গঠন করবে। একদলীয় বাকশাল সরকার গঠন করবে সেই উদ্দেশ্যেই তারা এই নির্বাচনের নামে একটা নাটক তৈরি করছে। ইতোমধ্যেই প্রত্যেকটা দেশ বলে দিয়েছে বাংলাদেশের যে নির্বাচন হচ্ছে এটা কোনো নির্বাচন নয়। তিনি আরও বলেন, আমরা বিগত এক বছর যাবত প্রতিবাদ করেছি। শুধু একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে পরিবর্তন আনার জন্য। আমরা সংঘাতের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা চাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের পরিবর্তন আনতে। এই সরকার দেশের সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করেছে।
এদিকে, বিকেলে অনলাইন ব্রিফিংয়ে রুহুল কবির রিজভী দাবি করেন, বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলে আওয়ামী লীগের ভোটের প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করেছেন জনগণ। এই ‘অবৈধ’ সরকার জোর করে ‘ডামি’ নির্বাচন করে দেশকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দেশে কোনো নির্বাচন নেই। জনগণের ভোটাধিকার নেই। কথা বলার স্বাধীনতা নেই। এটি কোনো নির্বাচন নয়, এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণামাত্র। এর আগে সকালে, ৭ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচন বর্জনসহ অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনি বাজারে গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণ করেন রিজভী। বিএনপির গণসংযোগ ও প্রচারপত্র বিতরণের এ দফার এই কর্মসূচি ২ জানুয়ারি শুরু হয়েছে, চলবে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত।