প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সরকার গঠন করার সময় সংবাদপত্র ছিল হাতেগোনা কয়েকটি। তখন অবাধে সংবাদ যাতে প্রকাশিত হতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। প্রথমে তিনটি প্রাইভেট চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি, তারপর এটি বাড়ানো হয়েছে। সেই সময় অনেকে বাধা দিয়েছিল যে, প্রাইভেটে টিভি চ্যানেল দেওয়া ঠিক হবে কি না? আমি যখনই যে কাজ করেছি সেখানে লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তখন আমি বলেছিলাম, যত বেশি টেলিভিশন দিতে পারব সেখানে সাংবাদিক থেকে শুরু করে বহু ধরনের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সাংবাদিক, শিল্পী, টেকনিশিয়ানসহ বহু ধরনের মানুষ কাজ পাবে তাদের জীবন চলতে পারবে। সেভাবে আমরা টেলিভিশনটা উন্মুক্ত করে দেই।
সোমবার (১০ জুলাই) অসুস্থ, অসচ্ছল এবং দুর্ঘটনা আহত ও নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের মাঝে অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমালোচনা ভালো কিন্তু সেটি গঠনমূলক হাওয়া উচিত। সেই সমালোচনার মধ্য দিয়ে সংশোধনীর সুযোগ থাকতে হবে। অপজিশন (বিরোধী দলগুলো) তো বলবেই। তারা সারাদিন কথা বলে। টকশোতে যা খুশি ইচ্ছামতো বলে যাচ্ছে। সব বলার পরও বলবে কথা বলার স্বাধীনতা নেই। তো স্বাধীনতাটা ছিল কখন। আইয়ুব খান, জিয়াউর রহমান নাকি এরশাদের আমলে ছিল?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা মনে করি, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। কিন্তু আমাদের ওপর ঝড়ঝাপটা কম যায়নি। যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর, সেই স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়ে যায়। পাকিস্তান আমলে সবসময় যেমন মিলেটরি ডিক্টেটররা যেমন ক্ষমতায় এসেছে। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ৭৫’র পর একই পন্থায় ক্ষমতা দখল করা হয়েছে। এরই মধ্যে আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। জনগণের ভোট এবং ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি। যার ফলে আজকে আমরা জনগণের সেবা করারও সুযোগ পেয়েছি। দেশের মানুষ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা যখন সরকার গঠন করি। তখন দেশে শুধু একটি টেলিভিশন ছিল। সেটিও সরকারি টেলিভিশন। আমরা তো আবার ভুলে যাই। ছয় ঋতুর দেশ, ঋতুও বদলায়, মনও বদলায়, স্মৃতিশক্তিও লোপ পায়। তখন সংবাদপত্র ছিল মাত্র কয়েকটি। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক সংবাদপত্র অফিস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পুড়িয়ে দিয়েছিল। জাতির পিতা সমস্ত সাংবাদিকদের সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়েছিলেন এবং চাকরির সুযোগও করে দিয়েছিলেন। জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল এ দেশের মানুষের যেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকে।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরাই বেসরকারি খাতের জন্য বিশেষ আইন করে বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করে অল্প সময়ের মধ্যে ৪৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিলাম। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে দেখি সেখান থেকে কমে ৩৮০০ মেগাওয়াট হয়ে গেছে। সেখান থেকে আমরা ২৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন করতে পেরেছি। আমরা যদি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা না নিতাম তাহলে চিন্তা করে দেখেন সেটা ৩৮০০ মেগাওয়াটে থাকত। হয়ত ১০০-২০০ করে বাড়ত।
সাংবাদিকদের আবাসনের বিশেষ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেককে প্লট দেওয়া হয়েছে, আবার অনেকে বিক্রিও করে দিয়েছে। সরকারিভাবে আমরা ফ্ল্যাট তৈরি করেছি, কিছু টাকা জমা দিয়ে, কোনোটা ১৬ বছর, কোনোটা ২৬ বছর ধীরে ধীরে টাকা জমা দিয়ে ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া যায়। সেভাবে আমরা অনেক ফ্ল্যাট তৈরি করেছি। সাংবাদিকরা চাইলে আমরা সেটা ব্যবস্থা করতে পারি। এদেশে কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। আমি সাংবাদিকদের বলব, তারা যদি ফ্ল্যাট কিনতে চান, আমরা বিক্রি করব।
তিনি আরও বলেন, ন্যাম সম্মেলন কেন্দ্রের জন্য আমরা যখন ফ্ল্যাট তৈরি করি, তখনই আমাদের লক্ষ্য ছিল যে, সেটি হওয়ার পর ফ্ল্যাটগুলো আমাদের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক…। আসলে তাদের চাকরির কোনো স্থায়িত্ব থাকে না, বয়স্ক বা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের কোনো সুযোগই থাকে না। সরকারি চাকরিতে অবসর ভাতা পাওয়া যায়। আমাদের রাজনীতিবিদদের জন্য কিছু থাকে না, সাংবাদিকদের জন্য কিছু থাকে না, এটা বাস্তব। এখন গণভবনে আছি ভালো কথা, তারপর কোথায় উঠব? আমি নিজের জন্য চিন্তা করি না, সবার জন্যই ভাবি। আমি আপনাদেরকে (সাংবাদিক) বলব আপনারা যদি কেউ ফ্ল্যাট কিনতে চান তাহলে কিস্তিতে দেব, সেভাবে আমরা ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছি। যদি নিজেরাই ঘর করতে চান তাহলে একটা জায়গা নির্দিষ্ট করে দেব।
পরে অসুস্থ, অসচ্ছল সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের অনুকূলে আর্থিক সহায়তার চেক হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচএফ