নয়া জঙ্গি তৎপরতা: বইমেলায় বোমা হামলার হুমকি

বাঙালি মননশীল র্চ্চার স্থান বাংলা একাডেমি। অমর একুশে বাঙালির অহংকারের দিন।  এই দিনকে ঘিরে বাঙালি জেগে উঠে অন্য এক শক্তিতে। রাজনীতি,সংস্কৃতি মুল বেদি শহিদ মিনার।  বাঙালি যখনই কোন সংকটে পড়েছে মুশষ্টিবদ্ধ হাত উচু করে সম্মিলিত হয়েছে শহিদের রক্তে গড়া বেদিমূলে।  সেখান থেকে শক্তি সঞ্চয় করে এগিয়ে গিয়েছে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে।  সেই একুশের চেতানায় চলে আসছে মাসব্যাপি বইমেলা।  বাংলা একাডেমি চত্বর ছাড়িয়ে এখন সোহারাওয়ার্দী মাঠের পুরো অংশে চলে এই মেলা। এই মেলার উপর চোখ পড়েছে জঙ্গীগোষ্ঠীর।  তারা উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে বইমেলাকে।  কী দুঃসাহসরে বাবা। বাঙালি কি জাগবে না?  সেই বায়ান্ন থেকেই তো বাঙালি লড়াই করে স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে।  সেই পরাজিত শক্তির কাছে কি মাথা নত হবে ?

চলমান অমর একুশে বইমেলায় বোমা হামলার হুমকি দিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) জাতিস্বত্তার কবি নূরুল হুদার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছে মাওলানা সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি।  গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে পাঠানো ওই চিঠিতে বইমেলায় বোমা হামলা করা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। পরে বাংলা একাডেমির নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি জানিয়ে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) দায়ের করেন।  জিডি নং ১৭০৪।

শাহবাগ থানা পুলিশ জানায়, জিডি হওয়ার পরপরই বিষয়টি তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানোর পাশাপাশি জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে গঠিত পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটকেও অবহিত করেছেন।  তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।  একই সঙ্গে বইমেলার সব প্রবেশ গেটে আগের চেয়ে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, শুরু থেকেই বইমেলায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।  এই জিডির পর আরও বেশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।  তবে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

বইমেলায় নিরাপত্তা জোরদারে পুলিশের তৎপরতা

সিটিটিসি ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, সাধারণত এ ধরনের চিঠি পাঠিয়ে জঙ্গিরা কোথাও হামলা করে না।  এটি আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য কেউ করেছে। তারপরও বিষয়টি উড়িয়ে না দিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চলছে।  বইমেলায় এলাকায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার বইমেলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের জন্য উপস্থিত থাকার কথা ছিল।  নিরাপত্তাজনিত কারণে তার সেই মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।

এদিকে আজ শুক্রবার সুনামগঞ্জের শাল্লা থানা-পুলিশের আবাসিক ভবন ‘স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট’ উদ্বোধন করতে গিয়ে  পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সে বাংলাদেশ পুলিশ। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশ বাহিনী আজ আন্তর্জাতিক মানের। আগামী নির্বাচন ঘিরে অপতৎপরতা ঠেকাতে পুলিশ প্রস্তুত।

চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা প্রতিহত করতে বাংলাদেশ পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে পুলিশের সক্ষমতায় রয়েছে ঈর্ষণীয় সফলতা।  হলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দেশে যেসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কর্মতৎপরতা দেখা দিয়েছিল, তা পুলিশ সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পেরেছে।

আপনারা জানেন, বর্তমান বাংলাদেশ পুলিশের সংযোগে এখন ৯৫ শতাংশ মামলা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বেগবান করা হয়।  এখন যেকোনো চাঞ্চল্যকর ঘটনার আসামি খুব দ্রুত ধরা সম্ভব।

তবে বইমেলায় বোমা হামলার হুমকি দেয়া হলেও  জঙ্গীরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আগামী নির্বাচনের আগে দেশে নানা ঘটনার সৃস্টি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার কাজেও লিপ্ত রয়েছে বলে আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে খবর রয়েছে।  তারা সর্তকতার সাথে সেই জঙ্গীদের গ্রেফতার নানা তথ্য প্রযুক্তির ব্যাবহারে কাজ করছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি র‌্যাবের অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ওরফে মাসুদ এবং সংগঠনটির বোমা তৈরির প্রশিক্ষক আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলমকে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশ থেকে গ্রেফতার করা হয়।  আত্মগোপনের উদ্দেশ্যেই তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে অবস্থান করছিল। আত্মগোপনে থেকে রোহিঙ্গাদের রিক্রুট করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গি সংগঠনের এই সদস্যদের।

কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া শুধু নয়, রোহিঙ্গাদের নিজেদের দলে টানতে সক্রিয় রয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ (হুজি)।  রোহিঙ্গাদের রিক্রুটের জন্য কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রাণিত করার জন্য মোটা অংকের টাকাও অনুদান দেওয়া হতো সংগঠন থেকে।

র‌্যাব বলছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল ইসলাম, জামায়াত মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি, হরকতুল জিহাদসহ বেশ কয়েকটি নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয় এই নতুন জঙ্গি সংগঠন।  এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য কী সে বিষয়ে এখনও স্পষ্ট জানা যায়নি।  জঙ্গি সংগঠনটি তাদের সক্ষমতা কিংবা পরিচয় প্রকাশের আগেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে পাকড়াও হয়েছে।  দলছুট হয়ে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে।  কোথাও নাশকতা কিংবা নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

এদিকে শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি)  দুপুরে সিটিটিসি প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান  গণমাধ্যমকে বলেন, পূর্বে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর বোমা হামলার নজির নেই। তবুও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।  চিঠির বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।  ডাকযোগে চিঠি পাঠানো হলেও কোথা থেকে এবং কীভাবে পাঠানো হয়েছে সবগুলো বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

ডিজিকে পাঠানো চিঠিতে লেখা আছে, ‘যাত্রাবাড়ীর দুটি বড় আবাসিক হোটেলে প্রকাশ্য দিবালোকে দেহব্যবসা হয়।  এগুলো বন্ধ করতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চিঠি দেওয়া হয়।  কিন্তু পুলিশ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

পাকিস্তানের করাচির মতো পুলিশ সদরদপ্তরে বোমা মেরে পুলিশকে হত্যা করা হবে।  এটা করার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, ‘চিঠি পাওয়া মাত্র যদি দেহব্যবসা বন্ধ করা না হয় তবে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলায় বোমা মেরে হামলা করা হবে।’

উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া বইমেলা আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।