সম্প্রতি বাংলাদেশে ২৫২ জন প্রশিক্ষণার্থী এসআইকে অব্যাহতি ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের পর তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রয়োগ করার বিষয়টি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে উঠে এসেছে। প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ মৌলিক স্বাধীনতা যেন উপভোগ করতে পারে সেটিই চায় ওয়াশিংটন।
স্থানীয় সময় সোমবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
এদিনের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিংখাত থেকে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ধনকুবেরদের ১৭ বিলিয়ন ডলার লুট ও বিদেশে পাচারের প্রসঙ্গটিও উঠে এসেছে।
এদিনের ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নকারী শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪০তম ক্যাডেট ব্যাচের ২৫২ উপ-পরিদর্শককে (এসআই) অব্যাহতি দেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২৫২ জন পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টরকে চূড়ান্ত নিয়োগ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সমস্ত হিন্দু অফিসারকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ধর্মীয় বৈষম্যের বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিক্রিয়া কী?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এই ধরনের কোনও রিপোর্ট দেখিনি, তবে স্পষ্টতই আমরা বিশ্বাস করি – আমি স্পষ্টতই বলতে চাই যে, আমরা বাংলাদেশে বা বিশ্বের যে কোনও প্রক্রিয়ায় যে কোনও ধরনের ধর্মীয় বৈষম্যের বিরোধিতা করি।
পরে ওই প্রশ্নকারী জানতে চান, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈষম্যহীন নিয়োগকে সমর্থন করার জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট কীভাবে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সাথে কাজ করছে? জবাবে মিলার বলেন, আমি আগে যা বলেছি, সেটার সাথে নতুন করে যোগ করার কিছু নেই।
কথিত বৈষম্যের এই ধরনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, আপনি আমাকে এমন একটি প্রতিবেদন সম্পর্কে অনুমানমূলক উত্তর দিতে বলছেন যা আমি দেখিনি এবং আমি আবারও আপনার এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেব না।
পরে ওই প্রশ্নকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের প্রয়োগ নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী আইন ব্যবহার করে ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করছে। সম্প্রতি এই সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক মতপ্রকাশের ওপর এসব পদক্ষেপের প্রভাবকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে দেখছে? দেশে ন্যায্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং নাগরিক স্বাধীনতাকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারে?
জবাবে মিলার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে— বাংলাদেশের জনগণের তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতাসহ তাদের মৌলিক স্বাধীনতাগুলো উপভোগ করতে পারা উচিত। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল যেই থাকুক না কেন, এটাই হওয়া উচিত এবং আমরা আমাদের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পাশাপাশি এই মঞ্চ থেকে এটি বহুবার স্পষ্ট করেছি।
পরে এক সাংবাদিক সম্প্রতি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সফর নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব। তিনি ডেপুটি সেক্রেটারি ভার্মা, আন্ডার সেক্রেটারি জন বাস এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ছাড়াও এনএসসি এবং গ্লোবাল অ্যান্টি-করাপশন কমিশনের সাথে মতবিনিময় করেছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আপনারা কীভাবে মূল্যায়ন করছেন সে সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ জানতে চাচ্ছি।
জবাবে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, এ বিষয়ে জানানোর জন্য আমার কাছে আর কোনও রিডআউট নেই।
পরে ওই প্রশ্নকারী বাংলাদেশের ব্যাংকিংখাত থেকে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ধনকুবেরদের ১৭ বিলিয়ন ডলার লুট ও বিদেশে পাচারের প্রসঙ্গে জানতে চান। তিনি বলেন, ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের মতে, শেখ হাসিনার সাবেক প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত টাইকুনদের বিরুদ্ধে তার শাসনামলে ব্যাংকিংখাত থেকে ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর। এটিকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা বলা হচ্ছে। আপনারা কীভাবে এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে এবং বিশ্বব্যাপী এই ধরনের অপরাধের জন্য দায়ীদেরকে জবাবদিহি করতে সাহায্য করতে পারেন?
ওই সাংবাদিক আরও বলেন, আজ এই ব্রিফিং রুমে আমার শেষ দিন কারণ আমি-বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আমাকে রাষ্ট্রদূতের পদে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছে এবং আমি তা গ্রহণ করেছি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাকে কোথাও পদায়ন করবে। সংবাদদাতা হিসাবে এই ব্রিফিং রুমে আমার গত ১০ বছরের যাত্রায় আমি আপনাকে এবং আমার সমস্ত সহকর্মীর কাছে কৃতজ্ঞ।
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আপনাকে ধন্যবাদ। প্রশ্নটির বিষয়ে বলব- আমি সেই প্রতিবেদনের বিষয়ে কথা বলতে পারি না যে এটির প্রভাব কী হতে পারে। তবে (নতুন পদে নিয়োগের জন্য আপনাকে) অভিনন্দন।