এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ

চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে স্ব স্ব শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একযোগে ফল প্রকাশ করা হয়। মোবাইল ফোন থেকে নিয়ম মেনে এসএমএস পাঠিয়েও শিক্ষার্থীরা ফলাফল জানতে পেরেছেন। কাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এবার পাসের হার কিছুটা কমেছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ১১ শিক্ষা বোর্ডে যেখানে গড় পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ, এবার তা কমে নেমেছে ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশে। অর্থাৎ, গত বছরের চেয়ে এবার পাসের হার কমেছে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা অবশ্য এবার ব্যাপক হারে বেড়েছে। গত বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। এবার ১১ বোর্ডে সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। সে হিসাবে এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৫৪৬ জন। ফলাফলের সারসংক্ষেপের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫ জন। সারাদেশের ৯ হাজার ১৯৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২ হাজার ৬৯৫ কেন্দ্রে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাস করেছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯৫ জন এবং ছাত্রী ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন। গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ছাত্রদের গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং ছাত্রীদের পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। মোট জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের মধ্যে ছাত্র ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন এবং ছাত্রী ৮০ হাজার ৯৩৩ জন। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে ফলাফলে এবার চমক দেখিয়েছে সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড। এ বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ। এবার পাসের হারে তলানিতে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। শীর্ষে থাকা সিলেট বোর্ডের পরেই রয়েছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড। বরিশালে পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তার কাছাকাছি অবস্থানে রাজশাহী বোর্ড। রাজশাহীতে পাসের হার ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ। পাসের হারে এরপর পর্যায়ক্রমে রয়েছে ঢাকা বোর্ড ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ ও যশোরে ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এ বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, সারাদেশে এক হাজার ৮১৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক লাখ ১৪ হাজার ৩৮২ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে পাস করেছেন এক লাখ ৭৫৬ জন। জিপিএপি-৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৯২২ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র এক হাজার ৫৩০ এবং ছাত্রী ৩ হাজার ৩৯২ জন।

আলিমে পাস ৯৩.৪০ শতাংশ
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় এবার পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, এ বছর সারাদেশের ২ হাজার ৬৮৩ মাদরাসার ৮৫ হাজার ৫৫৮ জন শিক্ষার্থী আলিম পরীক্ষায় অংশ নেন। তাদের মধ্যে পাস করেছেন ৭৯ হাজার ৯০৯ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৪২ হাজার ৭৯৩ ও ছাত্রী ৩৭ হাজর ১১৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৬১৩ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ৪ হাজার ৮৬০ ও ছাত্রী ৪ হাজার ৭৫৩ জন।

পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে মেয়েরা এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে মেয়েরা। এ বছর ছাত্রীদের পাসের হার ৭৯ দমশিক ৯৫ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক দিয়েও এগিয়ে রয়েছেন মেয়েরা। সারাদেশে মোট এক লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৮০ হাজার ৯৩৩ জন। আর ছাত্র ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন। এদিকে, সব শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে এ বছর ছাত্রের চেয়ে ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ ছাত্রী বেশি পাস করেছেন। এছাড়া ছাত্রদের তুলনায় ১৫ হাজার ৯৫৫ জন বেশি ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবার দেশের ৬৫ কলেজ-মাদরাসা থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেননি। গত বছর শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪২টি। সে হিসাবে এবার শূন্য পাস কলেজের সংখ্যা ২৩টি বেড়েছে। এ বছর দেশের এক হাজার ৩৮৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। গত বছরের চেয়ে এবার শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশ বেড়েছে। গত বছর অর্থাৎ, ২০২৩ সালে ৯৫৩ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছিলেন। সে হিসাবে এবার শতভাগ পাস করা কলেজের সংখ্যা ৪৩৫টি বেড়েছে। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় এবারও প্রবাস থেকে (বিদেশ কেন্দ্র) অংশ নেন শিক্ষার্থীরা। এ বছর ৮টি বিদেশ কেন্দ্রে বসে ২৮২ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ২৬৯ জন। সে হিসাবে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে অংশ নেওয়া সব (শতভাগ) শিক্ষার্থী পাস করেছেন। প্রকাশিত ফলাফলে কেউ যদি সন্তুষ্ট না হন, তাহলে উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ বা ফল পুনঃনিরীক্ষণের সুযোগ রয়েছে। এ ফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের টেলিটক সিম ব্যবহার করে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। পুনঃনিরীক্ষণ আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে বুধবার (১৬ অক্টোবর), যা চলবে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত। আবেদন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত ও প্রতি পত্রের জন্য কত টাকা ফি, তা ঢাকা বোর্ডের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে। এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয় ৩০ জুন। তবে সিলেট বোর্ডে বন্যার কারণে ৯ জুলাই থেকে পরীক্ষা শুরু হয়। সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় মাদরাসা বোর্ড ও কারিগরির পরীক্ষাও ৯ জুলাই শুরু হয়। সাধারণ অন্য ৮ বোর্ডে রুটিন মেনে ৩০ জুন বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা হয়। এরপর আবশ্যিক বিষয় বাংলা দ্বিতীয়পত্র, ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র এবং আইসিটি পরীক্ষা হয়। তারপর শুরু হয় বিভাগভিত্তিক বিষয়ের পরীক্ষা। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের পদার্থবিদ্যা, মানবিকের যুক্তিবিদ্যা এবং বাণিজ্য বিভাগের হিসাববিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলনে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিল হয়ে যায়। এতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য- তিন বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই তিনটি করে পরীক্ষা বাতিল হয়। পাশাপাশি ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়। এ কারণে পরীক্ষার ফলাফলে এসএসসি পরীক্ষায় এসব বিষয়ে যে নম্বর পেয়েছিলেন, এইচএসসিতেও সেটাই দেওয়া হয়। অর্থাৎ কেউ এসএসসিতে উচ্চতর গণিতে ৮০ নম্বর পেলে এইচএসসিতেও তিনি উচ্চতর গণিতে ৮০ পাবেন। বিভাগ পরিবর্তন করলে উচ্চতর গণিতের স্থলে অর্থনীতিতে সেই ৮০ নম্বর বা বাণিজ্যে থাকলে হিসাববিজ্ঞানে ৮০ নম্বর ধরে ফল তৈরি করা হয়েছে। এতে সাবজেক্ট ম্যাপিং নীতিমালা অনুসরণ করায় কেউ বঞ্চিত হননি।