দোহার উপজেলার নয়াবাড়ী ইউনিয়নের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও বাহ্রা হাবিল উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হারুন মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার (২ জুলাই) সকালটি দশটি সকালের মতো ছিলো না। সূর্যের আলো ফোটার পরপরই অন্ধকার নেমে এলো নয়াবাড়ির রাজনীতিতে। দুর্বৃত্তরা প্রাণ কেড়ে নিলো রাজনীতির মাঠের এক অভিজ্ঞ সংগ্রামী সৈনিককে। গুলি করে হত্যা করা হয়ে নয়াবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি, ইউনিয়ন বিএনপির ১নং উপদেষ্টা হারুনুর রশিদকে, যিনি সবার কাছে ‘হারুন মাষ্টার’ নামে পরিচিত ছিলেন। বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৫ বছর।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতিদিনের মতো ফজরের নামাজ শেষে নদীর পাড় দিয়ে হাঁটতে বের হয়েছিলেন। কিন্তু বুধবারের সকালে আর বাড়ি ফেরা হলো না তাঁর। সকাল ৬টার কিছু আগে হঠাৎ করে দুইটি মোটরসাইকেলে করে আসা চার(৪) যুবক তাঁর পথরোধ করে। কিছু বোঝার আগেই গুলি চালায়। গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা এলাকা। ছয়টি গুলি বিদ্ধ হয় হারুন মাষ্টারের মাথা, ঘাড় ও শরীরে। মাটি ভিজে যায় রক্তে। এছাড়াও, রয়েছে ছুরির আঘাতের চিহ্ন।
গুলির শব্দে দৌড়ে আসে স্থানীয় মানুষজন। চোখ ভরা অবিশ্বাস, আতঙ্ক আর কান্না নিয়ে তাঁকে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। কর্তব্যরত চিকিৎসক নুসরাত তারিন জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আমরা ৬টি গুলির চিহ্ন সনাক্ত করেছি। একটি গুলি চোয়াল দিয়ে বের হয়ে গিয়েছে। একটি গুলি পিঠে লেগেছে, ২টি কাধে,২টি পায়ে। এছাড়াও, শরীরে ছুরি দিয়ে আঘাতে মতো চিহ্ন রয়েছে।
নিহতের ভাতিজা মো. শাহিন কাঁপা কণ্ঠে বলেন, “প্রতিদিনই চাচা নামাজ শেষে হাঁটতে বের হতেন। কে বা কারা এমন নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করলো, কিছুই বলতে পারছি না। কাকা কইতো ১৭ বছর আওয়ামীলীগ আমারে কিছু করতে পারে নাই, এখন আর কে কি করবে?”
ঢাকা জেলা সহকর্মী পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম, ডিবির ঢাকা জেলা (দক্ষিণ) অফিসার ইন চার্জ সাইদুর রহমান এবং দোহার থানা অফিসার ইনচার্জ মো হাসান আলী দ্রুততম সময়ে খুনীদের গ্রেফতার এবং আইনের হাতে সোপর্দ করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
নয়াবাড়ি ইউনিয়নের মানুষের চোখে কান্না, হৃদয়ে আতঙ্ক। শুধু একজন রাজনীতিবিদ নয়, হারুন মাষ্টার ছিলেন এলাকার একজন অভিভাবক।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তদন্তে ব্যস্ত। চারপাশে থমথমে পরিবেশ। এলাকার মানুষ শোকে পাথর, কারো মুখে কথা নেই, আতংক ভর করেছে এই জনপদে।
হারুন মাস্টার খুন হওয়ায় —শুধু একটাই প্রশ্ন: কে হত্যা করলো বার বার কারাবরণকারী সংগ্রামী এই মানুষটিকে। মানুষটি বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী, যিনি জাতীয়তাবাদী শক্তির একনিষ্ঠ অনুসারী, তাঁকে কেন এভাবে গুলির মুখে মরতে হলো—এই প্রশ্নই এখন সবার।
তিনি ছিলেন গ্রামের মানুষের কাছে প্রভাবশালী, শিক্ষা, মানবিকতা আর বিচারিক সততার প্রতীক। সবার জিজ্ঞাসা অপরাধী গ্রেফতার হবে দ্রুততম সময়ে এবং যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হতে হবে দ্রুত।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ড শুধু নয়াবাড়ী ইউনিয়ন নয়, দোহারবাসীকেও কাঁদিয়েছে, করেছে আতংকিত। দেখা যায়,কিশোর গ্যাং, অবৈধ অস্ত্র, ডাকাতি, খুন, মাদক ও বালু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রশাসন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেই কোন কার্যকর ভূমিকা। দোহারের সকলের নিকট নিরাপত্তাহীনতা এখন প্রধান ইস্যু হয়ে দাড়ালো।
হারুন মাস্টার ছিলেন ঢাকা জেলা ছাত্রদলের (দক্ষিণ) সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওসার মাহমুদ শাওনের বাবা। শাওন বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী আছেন। সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিভিন্ন প্রোগ্রামে উপস্থিত থেকে বাস্তবায়ন করেন।
দলীয় কোন্দল নাকি পারিবারিক বা ব্যক্তি শত্রুতা,এটাও এখন নিরুপনের সময়।