যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক জেএমবি সদস্য গ্রেফতার

সারা দেশে একযোগে বোমা হামলার ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো তুহিন রেজা (৪২)  নামে এক জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) রাতে রাজধানীর তেজগাঁও রেলগেট এলাকা একটি বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের ভিডিও এডিটর ছিলেন।

শুক্রবার (২৩ জুন ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি জানান, গ্রেপ্তার তুহিন দেড়যুগ আগে ২০০৫ সালে সারা দেশে বোমা হামলার ঘটনায় ঝিনাইদহে দায়ের করা মামলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া আসামি। মামলার পর থেকেই তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। সিরিজ বোমা হামলায় সারা দেশের মতোই ঝিনাইদহ জেলার ডিসি অফিস, জজকোর্ট ও পায়রা বন্দরসহ কয়েকটি এলাকায় একই সময়ে একযোগে সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলাটি স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল ঝিনাইদহ কর্তৃক বিচার শেষে অভিযুক্ত ২১ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হলে আসামিদের সবাইকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। কিন্তু আসামিরা মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে আদালত তাঁদের অভিযোগপত্র পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে ২০০৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৪ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেন এবং ৭ জন আসামিকে খালাস দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপরতা শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত ১৪ জন আসামির মধ্যে ১২ জনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। পলাতক দুজনের মধ্যে ওই মামলার ১০ নম্বর আসামি ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে পলাতক জেএমবির সদস্য তুহিন রেজাকে বৃহস্পতিবার রাতে তেজগাঁও রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৭ নম্বর আসামি মোহন এখনো পলাতক রয়েছেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‍্যাব জানায়, গ্রেপ্তার তুহিন ২০০৪ সালে জেএমবির ঝিনাইদহ সদর শাখায় সদস্য হিসেবে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকে তিনি সংগঠণের লিফলেট তৈরি, লিখিত প্রচার-প্রচারণার সম্পাদনা, গোপন ও নাশকতামূলক খবরাখবর আদান-প্রদান, ভিডিও এডিটিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা বিভ্রান্তিমূলক প্রামাণ্যচিত্র দিয়ে তরুণদের পথভ্রষ্ট করতেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী হামলার দিন ভোর থেকেই অন্যান্য হামলাকারীর সঙ্গে তুহিন আদালত চত্বরের আশপাশে অবস্থান নেন এবং হামলার সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। এলোপাতাড়ি বোমা হামলার পর তাঁরা বিভিন্ন দিকে দৌড়ে পালিয়ে যান।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, তুহিন ১৭ আগস্ট বোমা হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে ঝিনাইদহ সদরে জঙ্গি ক্যাম্পে কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। এরপর তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হলে এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে কিছুদিনের মধ্যে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। এখানে তিনি প্রথমে যাত্রাবাড়ীতে, পরবর্তীতে খিলগাঁও, উত্তরা, মহাখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় স্থান পরিবর্তন করে বসবাস করেন। ২০২১ সাল থেকে তিনি তেজগাঁও এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন এবং সেখান থেকেই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পলাতক অবস্থায় তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভিডিও এডিটিংসহ বিভিন্ন সফটওয়্যারভিত্তিক কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন।