জাহাজভাঙ্গা শিল্প লাল শ্রেণিভুক্ত, ছাড়পত্র গ্রহণে জটিলতা
পরিবেশ অধিদপ্তর জাহাজভাঙ্গা শিল্পকে ফের ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত করায় ছাড়পত্র গ্রহণে নতুন করে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের আরোপিত নতুন নিয়মের কারণে জাহাজভাঙ্গার অনুমতি পেতে দীর্ঘসূত্রিতা বাড়বে। আর এতে হয়রানির সম্মুখীন হবে এ শিল্পের মালিকেরা।
জাহাজভাঙ্গা শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সাথে কোনো ধরণের পূর্ব আলোচনা না করেই এ শিল্পকে ‘কমলা-খ’ শ্রেণি হতে আবার ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত করায় ক্ষুব্ধ অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, বাংলাদেশের জাহাজ শিল্প মূলত চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। কাগজে-কলমে প্রায় ১৬০টির মতো ইয়ার্ড থাকলেও পূঁজি সংকট ও নানা জটিলতায় বর্তমানে ইয়ার্ডের সংখ্যা নেমে এসেছে ৪০টিতে। ২০০৪-২০০৯ এই পাঁচ বছর বাংলাদেশ জাহাজ ভাঙ্গাতে বিশ্বে প্রথম স্থানে ছিলো। ২০১২ সালে দ্বিতীয় স্থান দখল করে। বাংলাদেশের স্থানীয় রড এবং ইস্পাতের বাজার সর্ম্পূণভাবে এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপকূলে গড়ে ওঠা জাহাজভাঙ্গা শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় লক্ষাধিক শ্রমিক। এছাড়া জাহাজভাঙ্গা শিল্পের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে স্থানীয় সহ¯্রাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ী।
সূত্র মতে, জাহাজভাঙ্গা শিল্প ‘পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-১৯৯৭’ অনুযায়ী ‘কমলা-খ’ শ্রেণীভুক্ত ছিল। পরবর্তীতে পরিবেশ অধিদপ্তর উক্ত বিধিমালার পরিবর্তন করে ২০০৭ এর ১৪ নভেম্বর এটিকে লাল শ্রেণিভুক্ত করে। ওই সময় এ শিল্প সম্পর্কে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হওয়ায় বিএসবিআরএ এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রেণি পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো হয় এবং জাহাজভাঙ্গা শিল্পকে ‘লাল শ্রেণি’ থেকে ‘কমলা-খ’ শ্রেণিভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুরোধ এবং বিএসবিআরএ’র সুপারিশের প্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় শ্রেণি পরিবর্তন করে ২০২১ এর ১৯ নভেম্বর জাহাজভাঙ্গা শিল্পকে পুনরায় ‘কমলা-খ’ শ্রেণিভুক্ত করে। শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডকে না জানিয়ে, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার মতামত না নিয়ে এবং প্রধান স্টেক হোল্ডার হিসেবে বিএসবিআরএ’র মতামতের তোয়াক্কা না করে মার্চে জাহাজভাঙ্গা শিল্পকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২৩-এ আবার ‘লাল শ্রেণিভুক্ত করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, অভিযোগ বিএসবিআরএ-এর।
গত ৫ মার্চ গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। তথ্যমতে ৭২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ‘লাল শ্রেণিভুক্ত’ করে মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। তালিকায় লাল শ্রেণিভুক্ত ৭২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান/ প্রকল্পের মধ্যে শেষে রয়েছে ‘জাহাজ কাটা বা ভাঙ্গার কার্যক্রম এবং জাহাজভাঙ্গার ইয়ার্ড’। বিএসবিআরএ’র মতামত উপেক্ষা করার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন,এ শিল্পকে আবার লাল শ্রেণিভুক্ত করার ফলে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরকালীন জাহাজভাঙ্গা শিল্প সংক্রান্ত জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত সহযোগিতা স্মারক (মেমোরেনডাম অফ কো-অপারেশন) এর মর্যাদাহানি করা হয়েছে। তাছাড়া এ শিল্প সংক্রান্ত হংকং কনভেনশন রেটিফিকেশনের উদ্যোগে নেতিবাচক প্রভাবের আশংকা করছেন তারা। বিএসবিআরএ’র নেতারা এ ব্যাপারে শিল্পমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে সংকটের চিত্র তুলে ধরেছেন।
বিএসবিআরএ’র কর্মকর্তারা জানান,পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা-২০২৩ এ ‘লাল শ্রেণিভুক্ত করায় বিভাজনের পূর্বে প্রতিটি জাহাজের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হতে ২য় দফা পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এতে একটি জাহাজভাঙ্গার জন্য অনুমতি পেতে অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই মাস সময়ক্ষেপণ হবে। এছাড়া এ ব্যবস্থা আরোপের ফলে জটিলতার পাশাপাশি ইয়ার্ড মালিকদের হয়রানি বেড়েছে।
জাহাজ সৈকতায়নের পর কাটিংয়ের পূর্বে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণের জটিলতা ও বিলম্বের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাহাজ বিভাজন করতে না পারায় ইয়ার্ড মালিকগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। কমলা-ক শ্রেণিভুক্ত হলে ছাড়পত্রের ঝামেলা ও হয়রানি কম।
এ ব্যাপারে বিএসবিআরএ’র সভাপতি আবু তাহের দেশ বর্তমানকে বলেন, আমাদেরকে না জানিয়ে কমলা-খ থেকে লাল শ্রেণিভুক্ত করা মোটেই বোধগম্য নয়। এতে হয়রানি বাড়বে। জাহাজভাঙ্গার অনুমতি নিতে সময়ক্ষেপণ হবে। ইয়ার্ড মালিকেরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তিনি জাহাজভাঙ্গা শিল্পকে কমলা-খ শ্রেণিভুক্ত করার দাবি জানান।