ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: ১৭ জনের মৃত্যু, ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে ৪১৯টি ইউনিয়নে আনুমানিক ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবং ১৭ জনের মৃত্যূ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘প্রায় ৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি এবং ১ হাজার মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিভিন্ন স্থানে বেশকিছু গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি উপরে গেছে।’

উপকূলীয় অঞ্চলে সিত্রাংয়ের আঘাতে এখন পর্যন্ত দেশের আট জেলায় ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদিকে সচিবালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে নিজ সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে উপকূলীয় এলাকার প্রায় ৮০ লাখ গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন। আগামীকাল বুধবার দুপুরের মধ্যে পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।’

সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে ৪১৯টি ইউনিয়নে আনুমানিক ১০ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক সানাউল হক মণ্ডল বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব থেকে বাংলাদেশ এখন বিপদমুক্ত।’

তিনি বলেন, ‘স্থল ও জলসীমা মিলিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশে মোট ১৫ ঘণ্টা অবস্থান করে। আজ সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ উপকূলীয় জেলাসহ দেশের আবহাওয়া পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশাল বিভাগে সর্বোচ্চ ৩২৪ মিলিমিটার এবং ঢাকায় ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তবে বৃষ্টিহীন ছিল দিনাজপুর ও পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়া।’

মৃত্যু ১৭ জনের
উপকূলীয় অঞ্চলে সোমবার রাতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এতে এখন পর্যন্ত দেশের ৯ জেলায় ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হেসাখালে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে গাছ পড়ে একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী-শিশু সন্তানসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার রাত ৯টায় এ ঘটনা ঘটে । নিহতরা হলেন-স্বামী নেজাম উদ্দিন, স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথি ও তাদের দুই বছরের শিশু নুসরাত। নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান মেহবুব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর একটি ক্যানেলে নৌকাডুবিতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আরও তিনজনকে উদ্ধার করে পুলিশ ও স্থানীয় জনতা। নিহত দুজন হলো পূর্ব মোহনপুর গ্রামের খোকন শেখের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা (৩০) ও তাদের শিশু সন্তান আরাফাত। সোমবার রাতে সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব মোহনপুর এলাকায় নির্মাণাধীন শিল্পপার্কের উত্তরপাশে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বসতঘরে গাছ ভেঙে পড়ায় চাপা পড়ে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে বাবা ও ছেলে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার কনকসার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। নিহত দুজন হলো—কনকসার গ্রামের আসমা বেগম আশু (২৮) ও তার মেয়ে সুরাইয়া (৩)। আহত দুজন হলো—নিহত আসমার স্বামী আব্দুর রাজ্জাক (৩৫) ও তাদের ছেলে আরাফাত (১০)।

ভোলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সদর, দৌলতখান, লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও পাঁচজন। নিহতরা হলেন—ভোলা সদরের ধনিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চেওয়াখালী গ্রামের মো. মফিজুল ইসলাম (৬০), দৌলতখান পৌর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের খাতিজা বেগম (৬০), চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের মো. মনির হোসেন (৩০) ও লালমোহন উপজেলার লর্ডহাডিঞ্জ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রাবেয়া বেগম (২৫)। আরেকজনের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় ঘরের ওপর গাছ উপড়ে পড়ায় জয়নাল আবেদীন ভুইয়া নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ধ্বজনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জয়নাল গোপীনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার পরিষদ চত্বরে গাছের ডাল পড়ে মর্জিনা বেগম মানে একজন নিহত হন। বরগুনা সদর উপজেলার সোনাখালী গ্রামে ঘরের ওপর গাছ পড়ে আমেনা খাতুন নামে এক গৃহবধূ নিহত হন। এ ছাড়া ঢাকা ও শরীয়তপুরে একজন করে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।