চট্টগ্রাম বন্দরে এলসিএল কনটেইনার আনস্টাফিং যাচ্ছে বেসরকারি খাতে

বেসরকারি ব্যবস্থাপনার সুফল ধরে রাখতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ

দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন চট্টগ্রাম বন্দর। গত কয়েক বছরের মধ্যে দেশের এই প্রধান সমুদ্রবন্দরের নানা খাতে অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। বন্দরের অভ্যন্তরে চিরাচরিত সেই হাঁকডাক নেই, নেই ঠুনকো অজুহাতে শ্রমিক ধর্মঘটের হুমকিও। কমেছে জাহাজের গড় অবস্থান। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কনটেইনার শনাক্তকরণ আর লোডিং-আনলোডিংয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের কারণে বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে কয়েকগুণ। বন্দরের স্টেকহোল্ডারদের সেবাপ্রাপ্তি নিয়ে আগের মতো ঢালাও অভিযোগও নেই।

বেশকিছু নতুন প্রকল্প গ্রহণের পাশাপাশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় সব সূচকেই অগ্রগতি দৃশ্যমান বলছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) ধরে রাখতে চায় এর সুফল। এরই ধারাবাহিকতায় এবার এলসিএল (লেস দ্যান কনটেইনার লোড) কনটেইনার আনস্টাফিং এবং পণ্য খালাস চলে যাচ্ছে বেসরকারি খাতে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ছাড়পত্র পেলেই কাজ শুরু করবে বেসরকারি সংস্থা।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, বন্দর শেড থেকে এলসিএল কার্গো ডেলিভারি নিতে দেরি হলে পণ্যের জট সৃষ্টি হতো। যার কারণে বন্দর ইয়ার্ডে বিঘ্নিত হতো অপারেশনাল কার্যক্রম। সংকট উত্তরণে বন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের চিঠি দিতো। এ বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে স্টেকহোল্ডারদের দৃষ্টি আকর্ষণের রেকর্ডও কম নেই। পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০০৪ সাল থেকে আইএসপিএস কোড বাস্তবায়ন করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ আনস্টাফিং কার্যক্রম সরানোর উদ্যোগী হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথমদিকে ‘বে কার্গো সেন্টার’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষের পাঁচ বছরের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বেসরকারি এই সংস্থাটি বন্দরের সুইমিং পুলসংলগ্ন ‘এক্স’ ও ‘ওয়াই’ সংস্কার করে প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ‘এক্স’ শেডের সংস্কার কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে, চলছে ‘ওয়াই’ শেড সংস্কারের কাজ। শেড দুটির আয়তন ১৮ হাজার ৯০৪ দশমিক ৭৮ বর্গমিটার। বন্দরের চার নম্বর গেইট থেকে শেডের দুরত্ব দুই কিলোমিটারের বেশি নয়। সংস্থাটি নিজস্ব উদ্যোগে তিন দশমিক আট একর জায়গা জুড়ে কনটেইনার পার্কিং এবং এক দশমিক পাঁচ একর গাড়ি পার্কিংয়ের কাজও শেষ পর্যায়ে। বেসরকারি সংস্থাটি ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়েছে। কাজের ভলিউমের ওপর নির্ভর করে বাড়ানো হবে জনবলও, জানালেন সংস্থটির উর্দ্ধতন কর্মকর্তা।

চট্টগ্রাম বন্দরের অনুমতি পেয়ে ইয়ার্ড সংস্কারসহ উন্নয়নমূলক নানা কাজ সারলেও আটকে আছে এনবিআরের ছাড়পত্রে। এনবিআরের ‘বন্ডেড এরিয়া’ সনদ পেলে বে কার্গো সেন্টার আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এনবিআরে বন্ড লাইসেন্সের জন্য আবেদন করলেও এখনও মেলেনি । বন্দরের উল্লেখিত দুই শেডে আনস্টাফিং কাজের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান হলেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. মুশফিকুর রহমান।কমিটিতে বন্দরসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিও রয়েছে। কমিটি চট্টগ্রাম বন্দরের স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে গত ১৫ মে একটি সভা করেছে। স্টেকহোল্ডার এলসিএল কনটেইনার বন্দরের বাইরে সরানোর জন্য ইতিবাচক মতামত ব্যক্ত করেছেন।

কাস্টম সূত্রে জানা যায়, কমিটির মতামত এখনও এনবিআরে যায়নি। এনবিআরের ছাড়পত্র পেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে আগস্টে কাজ শুরু করার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত আরো দুই-তিন মাস পিছিয়ে যেতে পারে। এনবিআরের ছাড়পত্রের পর ট্যারিফ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যাবে বে কার্গো সেন্টার। এ প্রসঙ্গে বে কার্গো সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার কাজী আশেক আহমদ গতকাল মঙ্গলবার দেশ বর্তমানকে বলেন, এনবিআরের ছাড়পত্র এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে ট্যারিফ নিয়ে আলোচনাশেষে আমরা কাজ শুরু করবো। বন্দর কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ কনটেইনার ডেলিভারি দেবে আমরা সে পরিমাণ কনটেইনার আনস্টাফিং করতে পারবো।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক দেশ বর্তমানকে বলেন, এলসিএল কনটেইনার আনস্টাফিং করতে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে এখনও এনবিআরের অনুমতি পায়নি সংস্থাটি। এনবিআরের অনুমতি এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে প্রতিষ্ঠানটির কিছু আনুষ্ঠানিকতাশেষে কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে আগস্টে সম্ভব নাও হতে পারে, পিছিয়ে যেতে পারে আরো দুয়েক মাস।

এমএইচএফ