৫ বছর পর পর নির্বাচনি সহিংসতার অভিঘাতে পর্যটন খাত

বাংলাদেশে পর্যটনের ভরা মৌসুম নভেম্বর-ডিসেম্বর। বছরের এই সময়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকে মুখরিত থাকে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। কিন্তু হরতাল-অবরোধ রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটন গন্তব্যগুলো এখন অনেকটাই পর্যটকশূন্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি ৫ বছর পর পর জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতাও দেখা দেয় পর্যটনে ভরা মৌসুমে। পর্যটন খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা, পর্যটনে ভরা মৌসুম থেকে নির্বাচনের সময় পরিবর্তন করার দাবি এ খাত সংশ্লিষ্টদের।

ভরা মৌসুমেও পর্যটক নেই কক্সবাজারে। শুধু সমুদ্রসৈকতে নয়, সুন্দরবন, কুয়াকাটা, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, সিলেটসহ অন্যান্য পর্যটন গন্তব্যেও পর্যটক নেই। সারা দেশের হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজগুলো প্রায় ফাঁকা। পর্যটন এলাকার রেস্তোরাঁ, পরিবহনসহ সংশ্লিষ্টদের দিন কাটছে শঙ্কায়। পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল মানুষরা জীবিকার সংকটে পড়েছেন। নভেম্বর-ডিসেম্বর ভরা মৌসুম হলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা পর্যটন ব্যবসায়ীদের বড় ধরনের লোকসানের মধ্যে ফেলছে। প্রতি ৫ বছর পরপর এই সংকট দেশের পর্যটনের খাতের অগ্রগতির জন্য বড় ধরনের বাধা।

কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ছবি তুলে সংসার চালান মোহাম্মদ আতাউল। তিনি বলেন, ‘লোকজন একদম নেই বললে চলে। আশা নিয়ে বিচে আসি, খালি হাতে ফিরে যেতে হয়। কোনোরকমে টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছি। কিন্তু পর্যটক আরও কমে গেলে আমাদের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে।’

পর্যটকের খরা হলে সবচেয়ে বেশি ভোগেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল মানুষরা। তাদের জীবিকার সংকটে প্রকট হয়ে দেখা দেয়। কুয়াকাটায় ফেরি করে বিভিন্ন ধরনের খেলনা বিক্রি করেন মান্নান মিয়া। ভরা মৌসুমে ব্যবসা ভালো হবে এই আশায় ঢাকা থেকে খেলনা কিনে এনেছেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি উল্টো। প্রতিদিনের ঘরের বাজার খরচের টাকা তুলতে তার চিন্তা বাড়ছে। মান্নান মিয়া বলেন, ‘বেচাবিক্রি শেষ করে ঘরে বাজার করে ফিরি। যেদিন বিক্রি নাই, সেদিন মুদি দোকান থেকে বাকি নিই। কিন্তু তারা আর কত দিন বাকি দিবে?’

হরতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছে। বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যের হোটেলগুলোর বুকিং বাতিল হচ্ছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ‘পর্যটনের ভরা মৌসুম শুরু হয় নভেম্বর থেকে। মার্চ পর্যন্ত চলে পর্যটকদের আনাগোনা। প্রতি ৫ বছর পর পর ডিসেম্বর বা জানুয়ারি মাসে ভোট হয়। ভোটের আগে এক মাস নির্বাচনকেন্দ্রিক অস্থিরতা দেখা দেয়। এবার নভেম্বর মাস থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। যেহেতু জানুয়ারিতে ভোট, ফলে ডিসেম্বর মাসেও এই সংকট থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’