কয়লা সংকটে ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে পুনরায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। ফলে রামপালের ২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ মে) রাত ৯টা ১০ মিনিটে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটে উৎপাদন শুরু হয়।
এর আগে কয়লা সংকটের কারনে গত ২৪ এপ্রিল থেকে উৎপাদন বন্ধ ছিল এ কেন্দ্রটি। তবে আমদানি করা কয়লার সংকটে বার বার হোঁচট খাচ্ছে কাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ উৎপাদন। ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আসার পর এই কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু হল।
বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএলের) উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম জানান, মঙ্গলবার রাত ৯টায় রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সফলভাবে সিনক্রোনাইজেশন হয়েছে।
তিনি বলেন, এখান থেকে ২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে তা জাতীয় গ্রিডে দেয়া হচ্ছে। ন্যাশনাল লোড ডিসপ্যাচ সেন্টার বা এনএলডিসি’র চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বাড়ানো হবে জানান তিনি ।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট চালু হলে দিনে কয়লা লাগবে ৯ থেকে ১০ হাজার টন। বর্তমানে তাদের ৬ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ দেওয়া আছে। নতুন করে ডাকা দরপত্রে অংশ নিয়ে আরও ৬০ লাখ টন কয়লার ক্রয়াদেশ পেয়েছে দেশের বেসরকারি খাতের একটি শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ। শুরু থেকে তারাই এই কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করছে। ৬০ লাখ টন কয়লা দিয়ে আগামী তিন বছর রামপাল কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হচ্ছে এসব কয়লা।
২০১০ সালে ভারত ও বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেডের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) নামে কোম্পানি গঠিত হয়। এই কোম্পানির অধীনে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) নামে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়।
রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরম্ভা ইউনিয়নের সাপমারী কৈ-গর্দ্দাশকাঠি মৌজায় ১ হাজার ৮৩৪ একর জমি অধিগ্রহন শেষে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু হয়। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই শুরু হয় জমি ভরাট ও সড়ক নির্মাণের কাজ। প্রায় ৯ বছর বিশাল কর্মযজ্ঞ শেষে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায় প্রতিষ্ঠানটি।
এর আগে এ বছরের ১১ জুলাই বয়লার স্টিম ব্লোয়িং স্থাপন করা হয়। এক মাস পরে ১৪ আগস্ট টারবাইন-এ স্টিম ডাম্পিং এবং একদিন পরে ১৫ আগস্ট জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ সরবরাহ (ট্রান্সমিশন) শুরু করা হয়। পরে ১৭ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় গ্রিডে বাণিজ্যিকভাবে যুক্ত হয় এখানের বিদ্যুৎ। কিন্তু কয়লা সংকটে ১৪ জানুয়ারি প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।