১২ বছর পর আবারও রামুর বৌদ্ধ বিহারে আগুন

কক্সবাজারের রামু সদরে একটি বৌদ্ধ বিহারে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে বিহারের সিঁড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) গভীর রাতে উপজেলা সদরের চেরাংঘাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় লোকজন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাৎক্ষণিক গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানা গেছে। আগুনের সূত্রপাতের কারণ, এটি নাশকতা না-কি নিছক দুর্ঘটনা তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কুরআন অবমাননার অভিযোগ তুলে কক্সবাজারের রামুর বৌদ্ধবিহার ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বসতিতে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শত বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বড় ধরনের ফাটলের সৃষ্টি করেছিলো দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার ১২ বছর পর ফের বৌদ্ধ বিহারে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করেছে ‘দুর্বৃত্তরা’।

রামু থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান জানান, চেরাংঘাটায় রাখাইন সম্প্রদায়ের উসাইচেন বৌদ্ধ বিহারের (বড় ক্যাং) পুরোহিতসহ অন্যরা রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ২টার দিকে আগুন দেখে বিহারের ভেতরে থাকা লোকজন চিৎকার শুরু করলে এলাকাবাসী গিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে রামু ফায়ার সার্ভিসের লোকজন ঘটনাস্থালে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে বৌদ্ধ বিহারের কাঠের তৈরি একটি সিঁড়ি পুড়ে গেছে। তবে তাৎক্ষণিক আগুন নিভিয়ে ফেলায় বড় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, “আগুনের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে তা জানা যায়নি। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, তা এখনও নিশ্চিত না। বৌদ্ধ বিহারসহ আশাপাশের সব সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে।” যেকোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে অবস্থান করছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে গুজবের জেরে রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। ভাঙচুর করা হয় শত বছরের মূর্তি ও মন্দির। আগুনের লেলিহান শিখায় চাপা পড়ে যায় রামুর ইতিহাস, ঐতিহ্য আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। পুড়ে যায় ১২টি বৌদ্ধবিহার, ২৬টি বসতঘর। পাশাপাশি আরও ছয়টি বৌদ্ধবিহার এবং শতাধিক বসতঘরে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে উখিয়া ও টেকনাফে আরও চারটি বৌদ্ধবিহারে হামলা চালানো হয়। এতে পুড়ে যায় এসব বিহারে থাকা হাজার বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

এ ঘটনায় রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রামু থানায় আটটি, উখিয়ায় সাতটি, টেকনাফে দুটি ও কক্সবাজার সদর থানায় দুটি মামলা রেকর্ড হয়।