এক সময় আন্তঃজেলা ডাকাত হিসাবে কুখ্যাত ছিলেন কক্সবাজারের চকরিয়ার জাফর আলম। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দিয়ে হয়ে ওঠেন আরও ক্ষমতাধর। ২০১৪ সালে হাজারো সশস্ত্র সন্ত্রাসী ব্যবহার করে প্রকাশ্যে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আশীর্বাদ পান শেখ হাসিনার। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে একই পন্থায় ভোট ডাকাতি করে সারা দেশে ফের আলোচনায় আসেন তিনি। আর এমপি হওয়ার পর চার বছরেই তিনি হয়ে ওঠেন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে ২০০টি দলিলের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
অভিযোগ আছে, দুর্নীতি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে এ সম্পদ অর্জন করেন জাফর আলম। শুধু তিনিই নন, তার স্ত্রী শাহেদা বেগম, ছেলে তানভীর আহমেদ তুহিন এবং মেয়ে তানিয়া আফরিনের বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। দুদক এসব অভিযোগের তদন্ত করছে।
সূত্র মতে, গত বছর গ্রামীণ ব্যাংকের নামে বরাদ্দ করা রামপুর মৌজায় ৩০০ একর চিংড়ি প্রজেক্ট সন্ত্রাসী দিয়ে দখল করে নিয়েছেন জাফর। পরে তিনি এক সমাবেশে বলেছিলেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে ড. ইউনূসের ঘের দখল করে স্থানীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছি। আমি নিজের জন্য করিনি।
দুদক কক্সবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এমপি ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সাবরেজিস্ট্রির অফিস, চকরিয়া, কক্সবাজারে ২০১৬ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ক্রয়, আমমোক্তারের মাধ্যমে গ্রহণ, হেবাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২০০টি দলিল সম্পাদিত হয়েছে। এসব সম্পদের মূল্য অন্তত ১০০ কোটি টাকা।
এছাড়া তাদের নামে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের চকরিয়া শাখা, ইসলামী ব্যাংকের চকরিয়া শাখা, ইউনিয়ন ব্যাংকের চকরিয়া শাখা, ব্র্যাক ব্যাংকের কক্সবাজার শাখা, এক্সিম ব্যাংকের কক্সবাজার শাখাসহ বিভিন্ন ব্যাংকে কয়েক কোটি টাকার স্থায়ী আমানত এবং সঞ্চয়পত্র কেনা আছে তার। এটি তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমরা তদন্ত করছি। খুব দ্রুত জাফর আলমের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
সূত্র মতে, জাফর পেকুয়ায় জলাশয় ও পানি চলাচলের ড্রেন (সরকারি জায়গা) ভরাট করে তার মেয়ে তানিয়া আফরিন ও তার স্বামীর নামে ‘নিউ মার্কেট’ নির্মাণ করেছেন, যার আনুমানিক মূল্য ৮ কোটি টাকা। চকরিয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে এসি ল্যান্ড অফিসের সামনে জায়গা দখল করে তুহিন ও তানিয়া এবং আমান উদ্দিনের নামে মার্কেট তৈরি করা হচ্ছে-যার মূল্য দেড় কোটি টাকা। চকরিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড গ্রিন ভ্যালির পাশে তানিয়ার নামে ২ একর জমি ‘কিনে’ দখলে নিয়েছেন-যার মূল্য ৩ কোটি টাকার বেশি। চকরিয়া পৌরসভার চিরিংগায় তানিয়া ও তুহিনের মালিকানায় মাল্টিপ্লেক্স নামে মার্কেট নির্মাণ করেছেন। ওই মার্কেটে এরিস্টোডাইন নামে রেস্টুরেন্ট আছে-যার মূল্য প্রায় ২১ কোটি টাকা। এছাড়া তুহিনের নামে ৩টি বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে। তুহিন ২০ কোটি ২৫ লাখ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাচার এবং সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছেন। জাফর ও তার ছেলেমেয়েদের চেয়ে বেশি সম্পদ রয়েছে স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা শাহেদা বেগমের শাহেদার নামে।
সূত্র আরও জানায়, চকরিয়া থানা রাস্তার মাথায় নিজের নামে সিস্টেম কমপ্লেক্স ও শাহেদার নামে মাল্টিপ্লেক্স ভবন ‘শাহেদা কমপ্লেক্স’ গড়ে তুলেছেন জাফর। যার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা। এছাড়া চকরিয়া পৌর বাস টার্মিনালের পূর্বপাশের প্রাচীনতম জলাশয় দখল ও ভরাট করে একটি শিল্প গ্রুপের কাছে বিক্রি করেছেন তিনি।