সড়কে হ-য-ব-র-ল!

সড়কে চাঁদাবাজী বন্ধ না হলে শৃঙ্খলা ফিরবে না খন্দকার এনায়েত উল্যাহ, সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি

সড়কে চালকদের বেপরোয়া গতিতে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। মাঝরাস্তায় বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা আর পাল্লা দিয়ে আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় সড়কে ঝরছে প্রাণ। মামলা কিংবা চালককে গ্রেপ্তার করা হলেও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। হ-য-ব-র-ল অবস্থা অব্যাহতই থাকছে ঢাকার সড়কে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় খিলগাঁও মাঝরাস্তায় ছালছাবিল পরিবহন বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা করছে। বাসটি থামানোর আগে কোনো প্রকার সিগন্যাল লাইট জ¦ালায়নি। এভাবে প্রায় প্রত্যেকটা গাড়ির চালক একই কাজ করছিল। মালিকবাগ মোড়েও একই অবস্থা চোখে পড়ে। বাস চালকদের খামখেয়ালিতে লেগে যায় দীর্ঘ যানজট। ট্রাফিক পুলিশের চোখের সামনে হরহামেশা এমন ঘটনা ঘটছে। মাঝেমধ্যে দু-একটা গাড়িতে মামলা দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশই তারা দেখেও দেখেন না। শুধু বাসই নয়, সিএনজি, লেগুনা চালকদের আচরণও একই রকম।

এদিকে সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। পাল্লা দিয়ে বাস চালাতে দেখা যায় প্রায়অশই। এতে করে ঘটছে দুর্ঘটনা। সড়কের নির্ধারিত আইন মেনে গাড়ি চালাচ্ছে না কোনো চালকই। সবাইকে ইচ্ছে মত বাস চালাতে দেখা যায়। দিনের পর দিন নিয়ম অমান্য করেই গাড়ি চালাচ্ছে চালকরা।

স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের সড়ক আন্দোলনের পর কিছু দিন শৃঙ্খলা থাকলেও আগের রূপে ফিরেছে ঢাকার সড়ক। কে কাকে টপকে সামনে গিয়ে আগে যাত্রী তুলবে, চলে সেই প্রতিযোগিতা। এমনকি ঠিকমতো সিগন্যালও মানে না গাড়ি চালকরা। রাজধানীতে তুরাগ, সুপ্রভাত, অনাবিল, ৬ নম্বর, ৮ নম্বরসহ প্রায় সব গাড়িতেই একই চিত্র দেখা গেছে।

সড়ক আইনে বলা আছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার করলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে সাজা। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া গাড়ি চালালে, গাড়ির নম্বর প্লেট না থাকলে অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের সাজা দেয়া হবে। অথচ ঢাকার গণপরিবহনগুলো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মালিকানায় থাকায় সেগুলোর চালক বা গাড়ির কোন কাগজপত্রই যাচাই করা হয় না সহসায়।

এ ব্যাপারে গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) হাফিজুর রহমান রিয়েল বলেন, চালকের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মৃত্যু হচ্ছে সাধারণ মানুষের। পরিবহন খাত প্রভাবশালীদের হাতে। তাই ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়। কমলাপুর এলাকায় ডিউটিরত সার্জেন্ট মোহম্মদ হোসেন বলেন, বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। মামলা দিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না তাদের খামখেয়ালি।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, চালকরা বেপরোয়া হওয়ার পেছনে ট্রাফিক ব্যবস্থা দায়ী। ট্রাফিক পুলিশ চালকদের কোনো কারণ ছাড়াই মামলা দিয়ে থাকে। ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজী বন্ধ না হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশ সব সময় তৎপর রয়েছে। চালক ও গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করা হয়। ট্রাফিক পুলিশ সব সময় সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।