শরীয়তের দৃষ্টিতে সদ্ব্যবহার

মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের মধ্যেইে একমাত্র বিবেক আছে । তাই বিবেকবান জীব হিসেবে আমাদের উচিত সর্বদায় মানুষের সাথে ভালো ও সুন্দরভাবে কথা বলা।

ব্যবহার মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। ব্যবহারের মাধ্যমেই একজন মানুষের ব্যাক্তিত্ব প্রকাশ পায় । মানুষ ভালো কথাবার্তা ও আচার-ব্যবহার গঠনের মাধ্যমে নিজেকে শোভন, সুন্দর আর শ্লীল করে অন্যের আস্থাভাজন হয়ে উঠতে পারে। সুন্দর ব্যবহারকে ইসলামে অতি মূল্যবান ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

সবার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘তোমরা পিতামাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকটতম প্রতিবেশী, দূরবর্তী প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে।’ (সূরা আন নিসা-৩৬)
মানবসমাজে বংশের আসল পরিচয় হচ্ছে তার আচার-ব্যবহার। মানুষের সত্যিকার পরিচয় তার ব্যবহারেই ফুটে ওঠে। একজন মানুষ ভালো কি মন্দ, তা তার ব্যবহার দেখেই বোঝা যায়। ভালো ব্যবহার সম্পর্কে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ভালো কথা ও সাদকা করা উত্তম কাজ’।

বুখারি শরীফে আছে ,সুতরাং তোমরা দোজখের আগুন থেকে বেঁচে থাকো, একটি খেজুর দিয়ে হলেও। যদি তা না পাও, তাহলে মধুর ভাষা ও ব্যবহারের বিনিময়ে।’

পরিচিত লোকজনের সাথে কুশলাদি বিনিময় করা, ছোটদের স্নেহ-ভালোবাসা, গুরুজনদের মান্য করা ও অতিথিকে যথাসাধ্য আপ্যায়ন করা সবার দায়িত্ব। সালামের ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে খুশি মনে সালামের জবাব দেয়া অবশ্য কর্তব্য। সৎ মানুষকে সর্বোত্তম বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

একে অন্যের সাথে সবসময় হাসিমুখে কথা বলা উচিত। রাসূলুল্লাহ সা: সবসময় মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন ও সর্বোত্তম পন্থায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতেন। তাই পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান করো হিকমত (প্রজ্ঞা) ও সদুপদেশ দিয়ে এবং তাদের সাথে আলোচনা করো সদ্ভাবে।’ (সূরা আন নাহল-১২৫) রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘অশোভন-অশ্লীল কথা ও আচরণের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। আর যার আচরণ যত সুন্দর তার ইসলাম তত সুন্দর।’ (মুসনাদে আহমদ)

সদাচরণ ও নৈতিকতা জীবনে সফলতা বয়ে আনে। নৈতিকতাহীন আচরণ মানুষকে ঘৃণার পাত্র বানায় । পক্ষান্তরে, নীতি-নৈতিকতায় ভালো হলে মানুষ তার প্রতি আন্তরিক হয়। আচার-ব্যবহারে বিমুগ্ধ হয়ে তার প্রতি নিবেদিত হয়। তাই মানুষের সাথে কথা বলতে হবে বিনয়ী হয়ে ও নম্রভাবে। এটি রাসূল সা:-এর শাশ্বত ও চিরন্তন সুন্নত। আর দুর্বোধ্যতা ও অহঙ্কারের সাথে কথা বলা ইসলামে নিষিদ্ধ। এটি সামাজিক জীবনেও নিন্দিত ও ঘৃণিত। হাসিমুখে কথা বলা বড় পুণ্যের কাজ। সামান্য হাসি দিয়ে সহজেই মানুষকে আপন করা যায়। পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে আপন করে নেয়া যায়।