শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে হালদার রেণু বিক্রি, চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল

দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর রেণু চাহিদা দেশব্যাপী। আগামীকাল শনিবার সকাল থেকে রেণু বিক্রি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ডিম আহরণকারী ও মৎস্য কর্মকর্তারা। এবার হালদা নদী থেকে কার্প জাতীয় মা মাছের ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৬৬০ কেজি। পরিমাণ অনুযায়ী নমুনা ডিমের থেকে একটু বেশি বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। উপজেলা মৎস্য বিভাগের মতে প্রতি ৪০ কেজি নিষিক্ত ডিম থেকে রেণু উৎপাদন হয় ১ কেজি। সে হিসেবে প্রায় ৪১ কেজি রেণু উৎপাদন হওয়ার কথা। তবে রেণু উৎপাদন পক্রিয়া নানা করণে কম বেশি হতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

গত মঙ্গলবার হালদা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে সংগৃহীত ডিম হ্যাচারীতে রেখে রেণু উৎপাদন করা হয়। একাদিক ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার হালদার রেণু চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। কারণ একদিকে নদী থেকে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ কম, অপরদিকে যারা নদী থেকে নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেন তাদের অনেকের পুকুর বা মাছের ঘের রয়েছে। সে হিসেবে উৎপাদিত রেণুর অর্ধেক বেচা-কেনা হলেও বাকী অর্ধেক নিজেরাই রেখে দিবেন। এবার রেণুর পরিমাণ কম হওয়ায় প্রতি কেজি রেণু লাখ টাকার বেশি দামে বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা ডিম আহরণকারী, মৎস্য কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞদের। যদিওবা গত বছর প্রতিকেজি রেণু বিক্রি হয়েছিল ৮০ হাজার টাকা দরে।

অপরদিকে রেণু দুষ্প্রাপ্যতাকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দেশের বড় বড় কৃত্রিম রেণু উৎপাদনকারী হ্যাচারী থেকে রেণু সংগ্রহ করে হালদার রেণু বলে বিক্রি করার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারি হ্যাচারীতে যারা রেণু উৎপাদন করেছেন তাদের কাছ থেকে রেণু ক্রয় করলে ক্রেতারা হালদার আসল রেণু ক্রয় করা যাবে এবং ক্রেতারা সচেতন হলে অসাধু ব্যবসায়ীদের অসৎ উদ্দেশ্য সফল হবে না বলে মনে করছেন মৎস্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র মতে, এপ্রিল-জুন পর্যন্ত অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে বজ্রসহ মুশলধারে বৃষ্টি হলে পাহাড়ী ঢলে কার্পজাতীয় মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। নমুনা ডিম মা মাছের প্রাকৃতিক প্রজননের জন্য প্রস্তুতের আভাস। মাছ আগে নমুনা ডিম ছেড়ে পরীক্ষা করে নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকূল পরিবেশ আছে কি-না। অনুকূল পরিবেশ তৈরি হলেই পুরোদমে ডিম ছাড়ে মা মাছ। গত মঙ্গলবার নমুনা ডিম সংগ্রহ করা হলেও পরিমাণে বেশি হওয়ায় একে নমুনা ডিম বলতে নারাজ কিছু সংখ্যক ডিম আহরণকারী। পুরো দমে ডিম ছাড়ার আশায় থাকলে অমাবস্যার তিথি বা জোঁ এর শেষ দিন গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বজ্রছাড়া বৃষ্টি হলেও পুরোদমে ডিম ছাড়েনি মা মাছ।

আগামী ২০ মে -২৫ মে পর্যন্ত পূর্ণিমার জো’তে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞাদের। হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, আমি তিন বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি, আধা কেজি মতো রেণু উৎপাদন হয়েছে। তবে আমি বিক্রি করবো না, আমার ৭টি পুকুর রয়েছে রেণুগুলোকে পোনায় রূাপান্তর করে ৭টি পুকুরে অবমুক্ত করবো। রাউজান উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২৫০টি নৌকায় করে ৫০০ জন ডিম সংগ্রহকারী ১৬০ বালতি বা ১ হাজার ৬৬০ কেজি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেন। এসব ডিম থেকে রাউজানের সরকারি-বেসরকারি দুটি এবং হাটহাজারী অংশের তিনটি হ্যাচারীতে রেখে রেণু উৎপাদন করেন ডিম আহরণকারীরা। সরকারি-বেসরকারি ৫টি হ্যাচারীতে আগামীকাল সকাল থেকে রেণু বিক্রি শুরু হবে।

এখনো পর্যন্ত দাম নির্ধারণ হয়নি, ক্রেতা-বিক্রেতার দর কষাকষিতে দাম নির্ধারণ হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পানি ছাড়া প্রতি ৪০কেজি ডিম থেকে এক কেজি রেণু উৎপাদন হয়। মঙ্গলবার নদী থেকে যে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছিল তা নমুনা ডিমের চেয়ে বেশি। তবে সামনে আরও জো থাকায় আবারও ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জো’তে বজ্রসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ। প্রসঙ্গত, গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে ১৪ হাজার কেজি, ২০২২ সালে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কেজি, ২০২১ সালে সাড়ে ৮ হাজার কেজি, ২০২০ সালে হালদা নদীতে রেকর্ড ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি, ২০১৯ সালে প্রায় ৭ হাজার কেজি, ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ ( তিন দফা নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেছিলেন ডিম সংগ্রহকারীরা।