রোববার থেকে উৎপাদনে যাচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র

বন্ধের ২০ দিন পর চালু হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা। কয়লা শেষ হয়ে যাওয়ায় চলতি মাসের শুরুতে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা নিয়ে এরই মধ্যে একটি জাহাজ বাংলাদেশে এসেছে। এর ফলে, আগামীকাল রোববার থেকে পুনরায় চালু হচ্ছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন।

গত বৃহস্পতিবার (২২ জুন) দিবাগত রাত তিনটায় ইন্দোনেশিয়া থেকে এম ভি অ্যাথেনা জাহাজ ৪১ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে পায়রা বন্দরের ইনার চ্যানেলে অবস্থান করে। তখন জানানো হয় জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করে কেন্দ্রে পৌঁছানো ও বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

এরপর শুক্রবার (২৩ জুন) দিবাগত রাতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ও ৩২ মিটার প্রস্থের মার্শাল আইল্যান্ডের পতাকাবাহী এমভি অ্যাথেনা নামের একটি মাদার ভ্যাসেল পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৪১ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে এসেছে।

জানা গেছে, পায়রা বন্দরের ইনার অ্যাংকরেজ থেকে রাতেই পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটিতে পৌঁছানোর পরপরই আনলোড শুরু করে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, মজুত পুরোপুরি শূন্য হওয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর পাশাপাশি কয়লা মজুত করা হবে। প্রথম চালানের কয়লা দিয়ে আপাতত একটি ইউনিটে দৈনিক ৫২৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। ২ জুলাই কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে জাতীয় গ্রিডে মোট ৭৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে।

প্রকৌশলী শাহ আব্দুল হাসিব জানান, এ কয়লা দিয়ে ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট চলে ৬ দিন। দুটি ইউনিট মাত্র তিনদিন চালানো সম্ভব। এর আগে কয়লা সংকটে গত ০৫ জুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হলে বিদ্যুতের ঘাটতি কিছুটা কমতে পারে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি (বিসিপিসি) পটুয়াখালীর পায়রায় এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। কেন্দ্রটির মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব রয়েছে।

ডলার সংকটে যথাসময়ে কয়লা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় গত ২৫ মে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ৫ জুন বন্ধ হয় দ্বিতীয় ইউনিট। ফলে লোডশেডিং বৃদ্ধি পায়। তখন সরকার জানিয়েছিল, দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ফের চালু হবে। পূর্ণ ক্ষমতায় এটি চালাতে ১১ থেকে ১২ হাজার টন কয়লা লাগে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, যা দেশের গড় উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ।

প্রায় ৩৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া থাকায় চীনের সিএমসি কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। পরে সরকারের ওপর মহলের হস্তক্ষেপে ধাপে ধাপে ১০০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়। তা দিয়ে আগামী ৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৭টি জাহাজের এলসি খোলা হয়। এতে প্রায় ৭ লাখ ৩০ হাজার টন কয়লা আনা যাবে। নতুন করে আরও কয়লা আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

এমএইচএফ