আরব ও মুসলিম আমেরিকানদের জন্য কঠিন এক পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। কয়েকদিন পরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, আর এই নির্বাচন ঘিরে ‘জলে কুমির ডাঙায় বাঘ’ পরিস্থিতির সামনে তারা।
একদিকে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস গাজা ইস্যুতে অবস্থান অপরিবর্তিত রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন। যার অর্থ, নির্বাচনে জিতলে গাজায় গণহত্যা এবং লেবাননে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাতে ইসরাইলকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাবেন তিনি।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলার প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘প্রবল সমর্থক’ হিসেবে পরিচিত। তবে যেহেতু বর্তমান বাইডেন-কমলার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মার্কিন প্রশাসন ইসরাইলকে ‘অকাতরে’ গণহত্যা চালাতে সাহায্য করে যাচ্ছে, তাই আরব ও মুসলিম ভোটারদের একটি বড় অংশ আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দেবেন বলে মনে করছে তার ক্যাম্পেইন।
সম্প্রতি মিশিগানের মুসলিম অধ্যুষিত ডিয়ারবোর্ন অঞ্চলে ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করেন ট্রাম্প। সেখানে লেবানন এবং গাজায় যুদ্ধ বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এই সাবেক প্রেসিডেন্ট। তার বক্তব্য শুনে সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পকে নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
ডিয়ারবোর্ন অঞ্চলের সবচেয়ে বড় হালাল রেস্তোরাঁ ‘দ্য গ্রেট কমোনার’-এর ব্যবসায়িক পরামর্শক অ্যালবার্ট আব্বাস বলেছেন, ‘আরব এবং মুসলিম আমেরিকানদের নিয়ে ইতিবাচকভাবে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি লেবানন এবং ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই প্রতিশ্রুতির পর দেশের বেশিরভাগ আরব এবং মুসলিম আমেরিকান ট্রাম্পকেই ভোট দেবেন।’
তবে ডিয়ারবোর্নের সব মুসলিমরা অবশ্য আব্বাসের সঙ্গে একমত নন। যেমন ডিয়ারবোর্নের প্রথম আরব ও মুসলিম মেয়র আব্দুল্লাহ হামুদ ট্রাম্পের আমন্ত্রণ পেয়েও তার সঙ্গে বৈঠকে অস্বীকৃতি জানান। তবে কমলার সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন তিনি।
এক্ষেত্রে ট্রাম্প বিরোধী শিবিরে থাকা মুসলিম ভোটাররা মূলত তার আগের শাসনামলে কয়েকটি দেশের মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে সামনে এনেছেন। ২০১৭ সালে সাতটি মুসলিম প্রধান দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন ট্রাম্প। ব্যাপক সমালোচনার তার সে সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতেও যান বিক্ষুদ্ধরা।
সে বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে এক্স-এ করা এক পোস্টে হামুদ লিখেছেন, ‘মুসলিমদের নিষিদ্ধ করার কারিগর ডিয়ারবোর্নে ভোট চাইতে এসেছে। এই সম্প্রদায়ের মানুষ ভালোভাবেই ট্রাম্পকে চেনে, তার জন্য আমাদের বছরের পর বছর ভুগতে হয়েছে। আমি কখনোই ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নেব না।’
যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম ভোটারদের জন্য তাই সত্যিই কঠিন এক পরীক্ষা অপেক্ষা করছে। সে পরীক্ষার কোনো ফলাফলই তাদের জন্য শুভ নয়।