রাজধানীর শরীফবাগ জামে মসজিদের জমি দখল করেননি বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত সাবিনা মমতাজ। তিনি বলেছেন, বরং তার পরিবার প্রথম থেকেই এই মসজিদ প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও অনুদান দিয়ে আসছেন। গতকাল সোমবার বনশ্রী নিজের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন। সাবিনা মমতাজ বলেন, ‘আমরা জমি তো দখল করিই নি, বরং মসজিদের পূর্বদিকে ৫ ফুট জায়গা আমার পরিবার ছেড়ে দিয়েছে, যা মসজিদ কমিটি এবং এলাকার সকলেরই জানা। মসজিদ কমিটির তৎকালীন সভাপতি, সেক্রেটারী ও অন্যান্য সদস্য, শাহাবুদ্দিন (আলহাজ্ব হাফিজ উদ্দিন মাস্টারের ছেলে), মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হেলাল উদ্দিন ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে মসজিদের পূর্বদিকের সীমানা প্রাচীর দেয়া হয়, তখন মসজিদ কমিটি আলহামদুল্লিল্লাহ বলে আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করেন। তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে টাকার অভাবে মসজিদের জমি রেজিস্ট্রিশনের জন্য অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। তখন আমার পরিবার এককালীন ২২ লাখ টাকা (এক কাঠা জমির পরিমান মূল্য অনুযায়ী) অনুদানের চেক প্রদান করে এবং মসজিদের রেজিষ্ট্রিশন সম্পন্ন করা সম্ভব হয় এবং শরীফবাগ জামে মসজিদটি আল্লাহর রহমতে আলোর মুখ দেখতে পায়। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মসজিদের বিভিন্ন প্রয়োজনে অনুদান দিয়ে আসছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, সে মসজিদের বাথরুমগুলি আমাদের দেয়াল পর্যন্ত নিয়ে আসছে, যার জন্য দুর্গন্ধে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।’ জানাযায়, মসজিদ কমিটি রাজউকের নকশার ব্যাত্যয় ঘটিয়ে মূল মসজিদ ভবনটি মমতাজ পরিবারের পশ্চিম পাশের দেয়াল পযর্ন্ত ও মসজিদের উত্তর পার্শের কালাম সাহেবের সীমানা প্রাচীরের উপর পর্যন্ত নির্মাণ করে। কালাম সাহেবের ছেলে আফরোজ এই ব্যাপারে রাজউকে অভিযোগ দায়ের করেন। সাবিনা বলেন, ‘মসজিদের নামে যে পরিমাণ জায়গা রেজিস্ট্রি হয়েছে তার চেয়ে বেশি জায়গা দখল নিয়ে মসজিদ ভবনটি নির্মাণ করা হয়। অথচ কমিটি প্রচার করে যে, জায়গা কম আছে অর্থাৎ জমি কম আছে বলে যেন আশে পাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি মসজিদের নামে দখল করতে পারে।’ তার পরিবার রাজউক থেকে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া নিজ ভুমিতে আটবোনের কষ্টার্জিত অর্থে বহুতল ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘তখন থেকেই মসজিদ কমিটির দুষ্ট মহলটি মসজিদের সম্মুখে একাধিক প্রবেশ পথ থাকা সত্যেও তারা সাবিনার জমির উপর দিয়ে রাস্তা বের করার জন্য পবিত্র মসজিদকে ব্যবহার করে নানা ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকেন। আসলে স্বার্থান্বেষী মসজিদ কমিটি পবিত্র মসজিদকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে এর ভিতরে সুপারমার্কেট প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, এ জন্য মসজিদের সম্মুখে একাধিক প্রবেশ পথ থাকা সত্যেও মুসল্লীদের যাতায়তের নাম করে ও মসজিদকে ব্যবহার করে আমার জমির মধ্য দিয়ে রাস্তা বের করার পায়তারা করছে তারা। রাজউকের বিভিন্ন কর্মকর্তাদেরকে নানাভাবে প্ররোচিত করে ভবনের কাজ বন্ধ ও ভবনটি ভাংগার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘রাজউক ২৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে রাজউকের অনুমোদিত নকশা, রাজউককে জমা দিতে বলেন। মিসেস সাবিনা মমতাজ যথারীতি ২৮ এপ্রিল ২০২২ তারিখে রাজউক অনুমোদিত নকশার ফটোকপি জমা দেয়া হয়। কিন্তু সেই নকশার কপিটি কমিটির প্রধান রাজউকের কাউকে মেনেজ করে হাতিয়ে নেয় যা আইনের পরিপন্থী।’ সাবিনা মমতাজ জানান, ‘কমিটি প্রধান জিডিতে দাবি করেন যে আমার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় বাড়ির পাশ দিয়ে মুসল্লীদের চলার পথ দিয়েছিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে আমার পিতা ২০০৭ সালে ইন্তেকাল করেছেন অথচ শরীফবাগ মসজিদ ২০১৬ সালে জায়গা কিনে এবং প্রতিষ্ঠিত হয়। তাহলে ২০০৭ সালে মৃত ব্যক্তি কিভাবে ২০১৬ সালের তৈরি মসজিদের মুসল্লীদেরকে চলার পথ দিলেন? এতেই প্রমাণিত হয় যে তাদের সব অভিযোগ মিথ্যা। তাছাড়া তাদের স্বপক্ষে কোন প্রকার ডকুমেন্টও দেখাতে তারা ব্যর্থ হন। তিনি বলেন, ‘মসজিদ কমিটি ২০২২ সালের ২৮ জুলাই এ আমাদের জায়গার ব্যাপারে অভিযোগ করে থানায় জিডি করেন। জিডি নম্বর-১২৩৩। পরবর্তীতে সবুজবাগ থানা কর্তৃপক্ষ জিডির প্রতিবেদন সিএমএম আদালতে জমা দেন, যাতে সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সিএমএম আদালতের সার্টিফাইড কপি সাংবাদিকদের সম্মুখে প্রদর্শন করেন, যাতে সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে মাননীয় সিএমএম আদালত রায় দিয়েছিলেন। সাবিনা বলেন, ২০২২ সালের ৪ আগষ্ট এ স্থানীয় সাংসদের নির্দেশে সবুজবাগ থানায় এক বৈঠকে সকল প্রকার আলোচনা শেষে মসজিদ কমিটির এক উপদেষ্টা মোস্তাফিজুর রহমান দাঁড়িয়ে উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমরা এতদিন একটা বিভ্রান্তির মধ্যে ছিলাম যে মসজিদের জয়গার পরিমাণ কম আছে। আসলে আমি দেখেছি মসজিদ যে পরিমাণ জমি রেজিস্ট্রি করেছে তার চেয়ে বেশি জায়গা তারা দখল করে মসজিদ নির্মাণ করেছে। আর সাবিনা মমতাজের জমিতে কখনও কোন রাস্তা ছিল না এবং এখনো নেই। মসজিদ তার কাছে কোন জায়গা পাবে না।’ সাবিনা বলেন, ‘মসজিদ কমিটির প্রধানের নির্দেশে ১০/১২ জনের এক সন্ত্রাসী দল গত ২৮ মার্চ ঠিক ইফতারের সময় কমিটির পাঠানো সন্ত্রাসী বাহিনীর অতর্কিত হামলায় আটবোনদের একজন গুরুতরভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তার অবস্থা এখন আশংকাজনক। তিনি তার নিরীহ ভাইবোনদের জন্য সকলের কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন। পূর্বেও বেশ কয়েকবার তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছে সে চক্রটি এবং জোরপূর্বক জমি দখল ও অবৈধভাবে সাইনবোর্ড লাগানোর চেষ্টা করেছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমার পরিবার আতঙ্কগ্রস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন এবং ভয়ে আছেন, কখন আবার হামলা হয়!’
এর পরিপেক্ষিতে, প্রাণভয়ে, আত্মরক্ষার্থে এবং নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে ভবনের দক্ষিণ দিকে নিজেদের অরক্ষিত জায়গায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন জানিয়ে সাবিনা বলেন, ‘কিন্তু সেদিন সকালে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মন্ত্রী মহোদয়ের নাম ভাঙ্গিয়ে সাবিনা মমতাজের বোনেরা অনেক অনুনয় বিনয় করে দেয়াল না ভাঙ্গার অনুরোধ করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত না করে জোরপূর্বক সীমানা দেয়াল ভাঙ্গার আদেশ দেন এবং দেয়ালটির কিছু অংশ অবৈধভাবে ভেঙে দেন। এই দুষ্ট মহলের অত্যাচারে এই পরিবারের সকল সদস্য মানসিক ও শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সাবিনা মমতাজ বলেন, যারা এই ভূমি দস্যুতা, জবর দখল হুমকিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে এবং এলাকার অস্থিরতার নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের নিকট দাবি জানাচ্ছি।