দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন: ছাপাখানাগুলো নিচ্ছে আগাম প্রস্তুতি অপেক্ষা শুধু প্রতীক বরাদ্দের

নির্বাচন মানেই উৎসবের আমেজ। প্রার্থীরা কোমড় বেঁধে নেমে পড়েন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। চলে প্রচার-প্রচারণা। প্রয়োজন হয়, লিফলেট, পোস্টার আর ফেস্টুনের।

আর কিছুদিন বাদেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের সাথে সাথেই দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে খটখট শব্দে মুখর হবে ছাপাখানাগুলো। ছাপা যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসবে সাদা-কালো পোস্টার।

তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে উপজেলার ছাপাখানাগুলো। অনেকেই মেশিন পরিষ্কারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি মেরামতের কাজ সেরে নিচ্ছেন। কেউ কেউ সংযোজন করছেন নতুন ছাপা মেশিন।

শহরের নিমতলা মোড় এলাকার রংধনু প্রিন্টিং প্রেসে তেল ও পানি দিয়ে পরিষ্কার করা হচ্ছে মেশিনের যন্ত্রাংশ। সঙ্গে কালার প্লেট বসানোর স্তরগুলোও তেল দিয়ে ঘষে রাখছেন কর্মচারীরা। এতে করে সেখানে ময়লা পড়বে না। পাশাপাশি কাজের চাপ শুরু হলে সার্ভিসও ভালো পাওয়া যাবে এখান থেকে।

এসব ছাপাখানাগুলোর কোথাও কোথাও কিনে রাখা হয়েছে স্টিল জাতীয় প্লেট কোম্পানিগুলোতেও অর্ডার দিয়ে রাখা হয়েছে কাগজের। প্রতীক বরাদ্দ হলেই চাহিদা অনুসারে সেখান থেকে কাগজ এনে শুরু হবে পোস্টার ছাপানো।

তবে বর্তমান সময়ে কাগজ, কালিসহ অন্য জিনিসের দাম বেড়েছে। দেড় বছরের ব্যবধানে দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রতি রিম (৫০০ পিস) কাগজ বড় সাইজ (২৩ ইঞ্চি বাই ৩৬ ইঞ্চি) পুরুত্ব (পাতলা, মোটা) অনুসারে (৫৫ গ্রাম পুরুত্ব) দাম দুই হাজার ৩০০ টাকা, যা আগে ছিল এক হাজার ৩০০ টাকা। এই কাগজ কিনে কাটিং মেশিনের সাহায্যে সাইজ করে তা দিয়ে পোস্টার ছাপানো হয়। কালি প্রতি পাউন্ড কোম্পানি ভেদে গেলো দেড় বছরে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়।

তবে প্রস্তুতির মাঝেও কোথাও কোথাও প্রার্থীদের থেকে টাকা না পাওয়ার শঙ্কা থাকায় অনাগ্রহও রয়েছে কোনো কোনো ছাপাখানা মালিকের। কয়েকটি ছাপাখানায় এখনও বকেয়া রয়েছে গত পৌরসভা নির্বাচনের পোস্টার ছাপানোর টাকা। তবে হয়রানির ভয়ে নাম প্রকাশ করেন’নি তারা।

ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলায় ছাপাখানা রয়েছে ৫ থেকে ৬টি। ছাপার কাজের জন্য অফসেট মেশিনের এক্সপোজ মেশিন (প্লেট মেশিন), কালি রোল, প্লেট বাধা সিলিন্ডার, ছাপা সিলিন্ডার, কালি ও মবিল স্টোর, পানি স্টোর, হাওয়া সিলিন্ডার, চেইনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। সাধারণত কম্পিউটারে ডিজাইন তৈরি করে এক্সপোজ মেশিনের সাহায্যে প্লেটে ডাইস (ছাপ) তৈরি করা হয়। এরপর তা প্লেট সিলিন্ডারে দিয়ে প্রিন্ট করা হয়। আকার ভেদে একটি মেশিনে প্রতি মিনিটে ৭০ থেকে ১২০ পিস পোস্টার প্রিন্ট দেওয়া সম্ভব। এক হাজার পোস্টার ছাপালে গড়ে ৩০০ টাকা লাভ থাকে।

রংধনু প্রিন্টিং প্রেসের ম্যানেজার শাহিনুর ইসলাম শাহিন বলেন, ফুলবাড়ীতে প্রথম থেকেই ছাপাখানার এই ব্যবসাটি করে আসছেন আখতারুল সরকার বকুল। তিনি বর্তমানে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত। তবুও আমরা কয়েকজন কর্মচারী মিলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ছাপার কাজ অনেকদিন ধরেই খুব কম ছিল। তবে বর্তমানে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যবসা ভালো হবে এই আশায় মেশিনটির সকল যন্ত্রাংশ মেরামত ও তেল-মবিল ব্যবহার করে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। যেন প্রার্থীকে সব থেকে ভালো কাজটি উপহার দিতে পারি।

জয়ন্ত গ্রাফিক্সের সত্ত্বাধিকারী জয়ন্ত কুমার সাহা বলেন, সামনে নির্বাচন। এখন থেকেই অনেক কাজ অগ্রিম অর্ডার পাচ্ছি। ডিজাইন করে রাখছি। শুধু প্রতীক বরাদ্দের সাথে সাথে কাজ ছাপাখানাতে পাঠাবো। সময় মতো সবাইকে অর্ডার ডেলিভারি দিতে পারবো বলে আশা করছি।

শহরের এক ছাপাখানা মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সংসদ নির্বাচনে মোটামুটি প্রস্তুতি আছে কিন্তু খুব আগ্রহ নেই। কারণ প্রার্থীরা পোস্টার ছাপাতে তাড়াহুড়ো করে আর টাকা দিতে চায় না। টাকা চাইলেও হয়রানি করে। যেমন গত সদর পৌরসভা নির্বাচনের পোস্টার ছাপানোর ১৮ হাজার টাকা এখনও বকেয়া রয়েছে প্রার্থীর কাছে।

ফুলবাড়ীর পেপার হাউজের ব্যবসায়ীরা বলেন, একদিকে ডলার সংকট, অপরদিকে দাম বেশি। ফলে কাগজের কাঁচামাল কিনতে পারছে না কোম্পানিগুলো। এই কাঁচামাল কিনে সেগুলো রিফাইন করে কাগজ তৈরি করতে হয়। ফলে কাগজের দাম বেড়েছে।