চুয়াডাঙ্গায় পেঁয়াজ চাষে গত বছরের তুলনায় এ বছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত

 

পেঁয়াজের ঘাটতি পূরণে, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে ইতিমধ্যে বিপ্লব ঘটিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার চাষীরা।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায়, পেঁয়াজ চাষে সফলতা এসেছে । সেই আলোকে শীতকালীন পেঁয়াজ রোপনেও আগ্রহ বেড়েছে। গ্রীষ্মকালীন এর তুলনায় শীতকালীন পিয়াজ চাষে লক্ষ্যমাত্রা গতবছরের তুলনায় অর্জিত করা সম্ভব হয়েছে।

দেশে উৎপাদন করা পেঁয়াজ ফুরিয়ে যাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবে দাম বাড়ে পিয়াজের। তাই ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের উপর নির্ভর করতে হয় সরকারকে। তারপরও দাম থাকে আকাশছোয়া। তাই ভালো দাম পাওয়ার আশায় পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বেড়েছে চুয়াডাঙ্গার চাষীদের।

অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে বীজতলা তৈরির কাজ। এরপর বীজতলা থেকে চারা তুলে, জমিতে রোপন করেছেন চাষিরা। আগামী জানুয়ারিতে বাজারে পাওয়া যাবে এই পেঁয়াজ ।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ বছর সর্ব মোট চলতি অর্থবছরে গ্রীষ্মকালীন ১৫৩৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ২৮ হাজার ১শত ৬৪ মেট্রিক টন। চলতি শীতকালীন বর্তমানে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে প্রায় ১৬০০ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের ২ হাজার ১শত কৃষকের দেয়া হয়েছে প্রনোদনা। এর মধ্যে পেঁয়াজের বীজ, সার ইত্যাদি। এর মধ্যে পেঁয়াজের বীজ তলা থেকে শুরু করে সমস্ত উপকরণ বিনামূল্যে দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ১০১০ হেক্টর জমি থেকে চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ১৮০ মেট্রিক টন । ২০২০-২১ অর্থবছরের ১৯৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল ৩৬ হাজার ৭ শত ২৩ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরের বছরে ১৮৬৩ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছিল ৩৪ হাজার ৪শত ৬৫ মেট্রিক টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৫৩৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ২৮ হাজার ১শত ৬৪ মেট্রিক টন। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১৬০০ হেক্টর ইতিমধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার চাহিদা পূরণ করে সারাদেশে রপ্তানি করতে পারবে বলে আশা করছে চুয়াডাঙ্গা কৃষি বিভাগ ।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় পেঁয়াজ সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে দামুড়হুদা উপজেলায়। গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষিরা বলছেন, খুব অল্প খরচে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ ও এখন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে। বর্তমান সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়ায় চাষীরা এখন এই পেঁয়াজ চাষে ঝুকছেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলার মাঠে মাঠে দলবেঁধে লাইন করে, সকাল থেকে বিকেল অব্দি, সবাই একসাথে পেঁয়াজের জমিতে বসে পেঁয়াজের চারা পরিচর্যা করছেন । পেঁয়াজের দাম ভালো হওয়ায় জেলা জুড়ে পেঁয়াজের চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য সব ফসলের পাশাপাশি পেঁয়াজ চাষের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে চাষীরা।

চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গা উপজেলা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে মাঠের পর মাঠ জুড়ে পেঁয়াজের চারা রোপনের এবং পরিচর্যায় চাষীদের দম ফেলার সময় নেই। সারিবদ্ধভাবে পেঁয়াজ রোপন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

দামুড়হুদা উপজেলার ঘুরে দেখা যায়,পেঁয়াজের জমিতে চাষিরা পরিচর্যা করছেন। এ সময় পেঁয়াজ চাষী হোসেন জানায়, এক বিঘা পিয়াজ করতে খরচ হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত। চলতি মৌসুমের পেঁয়াজের আগাম চাষ করা হয়েছে। পেঁয়াজের বাজার মূল্য ভালো পাবেন বলে আশা করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে ইতিমধ্যে জেলার ২ হাজার ১ শত চাষীকে প্রণোদনার দেওয়া হয়েছে। দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো এবং আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য গ্রীষ্ম কালীন পেঁয়াজ চাষে জোর দেয়া হচ্ছে।