নগর গোয়েন্দা পুলিশের সর্বশেষ তালিকায় ১৬ থানায় সক্রিয় রয়েছে ৬২০ জনের অধিক ছিনতাইকারী। গেল সেপ্টেম্বর মাসের শেষ ১৩ দিনে নগর পুলিশের জালে ধরা পড়েছে ৭৪ জন। যেখানে নগর গোয়েন্দা পুলিশ ৬৩ জন এবং কোতোয়ালী থানা পুলিশ ১১ জনকে আটক করে। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়া ৬০ জনের মধ্যে ২০ জনেই নতুনভাবে তালিকায় যুক্ত হয়েছে। নতুন ২০ জন যুক্ত হয়ে বর্তমানে তালিকা ছিনতাইকারীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৪০ জনে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে, বাকি ৪৪০ জনকে খুঁজছে পুলিশ।
এক সময় যেখানে ছিনতাই হওয়া মালামাল উদ্ধার দূরে থাক, অপরাধীদের শনাক্তে বেগ পেত পুলিশ, সেখানে ১৩ দিনে ৭৪ জনকে আটকের সফলতা দেখিয়েছে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ।
সর্বশেষ গেল শনিবার ১৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধারসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দ পুলিশের বন্দর ও পশ্চিম বিভাগ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর অবসরে যাওয়া সরকারী কর্মকর্তা রুহুল আমিন পাহাড়তলীতে ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখায় থেকে পেনশনের পাওয়া ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, নুরুল হক সজিব (৩৩), মো. মহিউদ্দিন (৪২) ও মো. রায়হান (২৮)।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (বন্দর-পশ্চিম) আলী হোসেন জানান, গোয়েন্দা তথ্য ও ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছিনতাইয়ে জড়িত তিনজনকে শনাক্ত করা হয়। প্রথমে ঢাকায় মহিউদ্দিনের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। সেখানে অভিযান চালিয়ে মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। তার তথ্যে ভিত্তিতে সজীব ও রায়হানকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে সজীব থেকে নয় লাখ, মহিউদ্দিন থেকে দুই লাখ ও রায়হান থেকে ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনজনের কাছ থেকে মোট ছিনতাই করা ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গেল সেপ্টেম্বর মাসে সাত দিনে (১৭-২৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর চার থানা এলাকার পাঁচ চুরি ও ছিনতাই চক্রের ৬০ জনকে আটক করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উওর-দক্ষিণ) নিহাদ আদনান তাইয়ান দৈনিক দেশ বর্তমানকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, চুরিও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার লাগাম টেনে ধরতে পুলিশ কমিশনার স্যারের নির্দেশনায় নগরীর হালিশহর, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ, কোতয়ালী এলাকায় টানা সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ছিনতাইকারী, ডাকাত, গ্রিল কাটা চোর চক্র ও জুয়াড়িসহ মোট ৫টি চক্রের ৬০ জনকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে রকি বাহিনীর ৩ জন, রিপন বাহিনীর ৬ জন, সালমান বাহিনীর ৯ জন, মামুন বাহিনীর ৩ জন ও রতন বাহিনীর ৪ জন রয়েছে। প্রতি বাহিনীর মূল হোতারাও আটক আছে। এ সময় এদের কাছ থেকে একটি দেশীয় একনলা বন্দুকসহ একাধিক অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সংশ্লিষ্ট সকলের নামে নূন্যতম ২টি এবং সর্বোচ্চ ৮টি করে বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে।
এই উপ-কমিশনার আরও বলেন, থানা পুলিশের সাথে সাথে নগর গোয়েন্দা বিভাগ অন্যান্য অপরাধ রোখার পাশাপাশি ছিনতাই রোধেও বেশ তৎপর। আমাদের তালিকায় আটককৃতরা ছাড়া প্রত্যেককেই আমরা নজরদারীতে রাখার চেষ্টা করছি। আর যখনই কোনো ঘটনা ঘটে সংশ্লিষ্ট যারা থাকে তাদের নাম আমরা সংগ্রহ করি, তাদেরকে আটক করার চেষ্টা করি এবং তাদেরকে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করি। তালিকায় থাকা ছিনতাইকারীদের খুঁজছে বলেও জানান নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর-পশ্চিম বিভাগের এই উপ-কমিশনার।
এরই মধ্যে গেল শনিবার সকালে (২৩ সেপ্টেম্বর) নগরীর নিউমার্কেট ও স্টেশন রোড এলাকায় ছিনতাই ও ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে সাতটি ছুরি উদ্ধার করা হয়। কোতোয়ালী থানার ওসি জাহেদুল কবির ওই সময় বলেন, শনিবার রাতে ফ্রান্সিস রোডের মুখে অন্ধাকারাচ্ছন্ন গলিতে ছিনতাই ও ডাকাতির প্রস্তুতিকালে প্রথমে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চার-পাঁচজন পালিয়ে যায়। পরে দিবাগত রাত ১টার দিকে রেল স্টেশন সংলগ্ন বাস পার্কিং এলাকার ভেতর থেকে ছিনতাইয়ের প্রস্তুতিকালে আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আরও কয়েকজন পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ইয়াসিন আরাফাত (২২), মো. মাসুদ (৩২), আমিনুল ইসলাম (২০), মামুনুল ইসলাম (২২), মাঈন উদ্দিন (৩৫), ইয়াছিন হোসেন রবিন (২২), মো. সাগর (২২), মো. জাহিদ হোসেন (২৫), মো. সোহাগ (২৫), মো. শাকিল (২৪) ও মো. ওয়াসিম (২৪)।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতরা কয়েকজন করে একেকটা গ্রুপে ভাগ হয়ে নিউ মার্কেট মোড়, স্টেশন রোড, আন্দরকিল্লা এলাকায় বাসে থাকা অফিসগামীদের মোবাইল টান দিতো, মহিলাদের গলা থেকে চেইন টান দিয়ে ছিনিয়ে নিতো।
অপরাধ দমনে এমন তৎপরতা, দীর্ঘদিন থেকে পুলিশকে নিয়ে নাগরিকদের যে খারাপ ধারণা তা দূর হয়ে পুলিশের ভাবমুর্তি বাড়বে বলে মনে করছেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দি চৌধুরী। তিনি দেশ বর্তমানকে বলেন, পুলিশ যদি এভাবে আন্তরিকতার সহিত কাজ করে তাহলে অপরাধ সংঘটন অনেক কমবে। এ ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন করে, নাগরিকদের প্রতি দায়িত্ববান ও কর্তব্য পালনে নিষ্ঠাবান হয় সততার সাথে স্বচ্ছতার সাথে জবাবদিহিতার সাথে কাজ করে তাহলে অকারণে পুলিশভীতি দূর হয়ে সুশাসনের জন্য সুফল বয়ে আনবে।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আ স ম মাহতাব উদ্দিন নগরবাসীকে ছিনতাইয়ের শিকার হলে দ্রুত নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করার আহ্বান জানিয়ে দেশ বর্তমানকে বলেন, ভোক্তভোগীরা দ্রুত ও সঠিক তথ্য দিয়ে থানাকে অবহিত করলে আমরা অপরাধীদের ধরতে এবং ছিনতাই হওয়া মালামাল উদ্ধারে সহায়ক হয়। অপরাধ দমনে নগর পুলিশ সবসময় সজাগ ও তৎপর। কোন অপরাধী নগরীতে অপরাধ করে পার পাবেনা বলেও জানান অতি. এই পুলিশ কমিশনার।