আজ মঙ্গলবার ও পরদিন বুধবার দুইদিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি স্ব স্ব কর্মসূচি নিয়ে মুখোমুখি হচ্ছে রাজপথে। মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা সহ সারাদেশে সরকারেরর পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পদযাত্রা’ করবে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একইদিনে রাজধানীতে ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’ পালন করবে। জানা গেছে, দুই দলই বিশাল শোডাউনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ‘কেউ কারো নাহি জিনে সমানে সমান’। কিন্তু দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে জনমনে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বেড়েই চলছে। কর্মসূচির কারণে আজ রাজধানীর অনেকে হয়ত জরুরী কাজ না হলে ঘরের বাইরে খুব একটা বেরুবে না। যদিও এখনো পর্যন্ত দুই দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশের কারণে কোন ঘটনা ঘটেনি । তাই বলে যে কোন মুহূর্তে যেকোন ঘটনার সৃষ্টি হবে না সেই গ্যারান্টি কে দেবে। তবে ভরসা কিছু বিদেশিদের অবস্থান। দেশে এখন ইইউ’র ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অবস্থান করছেন। সূত্র বলেছে, গত ১২ জুলাই ঢাকায় দেড় কিলোমিটার দূরত্বে দুই দলের বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে শান্তিপূর্ণ ভাবে। কোন ধরনের সংঘাতের সৃষ্টি হয়নি। সবাই আশা করছেন আজও তেমনি শান্তিপূর্ণভাবেই দুই পক্ষই তাদের নেতাকর্মীদেরকে নিয়ে কর্মসূচি পালন করবে।
বিএনপি ১২ জুলাই নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পর পর দুই দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরদিন ১৩ জুলাই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের এক বৈঠকে ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’ কর্মসূচি ঠিক করে দলটি।
ঢাকায় মঙ্গলবার রাজধানীর গাবতলী থেকে রায়সাহেব বাজার মোড় (বাহাদুর শাহ পার্ক) পর্যন্ত পদযাত্রা করবে বিএনপি। এদিন দেশের সব জেলা ও মহানগরেও এ কর্মসূচি থাকবে। কর্মসূচি চলবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
এদিকে পদযাত্রা অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আমরা ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে গত ১২ জুলাই আমরা যে এক দফা দাবি করেছি, সেই দাবি আদায়ের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আলোচনাটি বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
তিনি আরও বলেন, আমরা আগামী ১৮ এবং ১৯ জুলাই দুটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। এর মধ্যে একটি হলো গাবতলী থেকে শুরু করে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা। আরেকটি হলো উত্তরা আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত। এই পদযাত্রা নিয়ে তাদের (ডিএমপি) খুব একটি আপত্তি নেই। আমরা ওনাদের সহযোগিতা কামনা করেছি। আশা করি তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।
একই দিন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বেলা তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোভাযাত্রা করবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। উপস্থিতি থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একই দিন রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের প্রতিটি জেলায় অনুরূপ কর্মসূচি থাকবে। তবে এসব শোভাযাত্রার সময় ও স্থান স্থানীয় নেতারা ঠিক করবেন।
আগামীকাল বুধবার ঢাকায় বিএনপির পদযাত্রা শুরু হবে রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে সকাল ১০টায়। এটি যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হবে।
একই দিন বুধবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় থেকে মহাখালী পর্যন্ত। এটি বাস্তবায়ন করবে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ। ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা এতে অংশ নেবেন। এদিন রংপুর, ঢাকা, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শোভাযাত্রা কর্মসূচি সফল করার জন্য দল এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সূত্র জানিয়েছে, আগস্টে মাসজুড়ে শোকের মাসের কর্মসূচি থাকবে। এর বাইরে বিএনপির যেকোনো কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে নিজেরা কর্মসূচি পালন করবে। বিএনপি বড় জমায়েত করার চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগও বেশি লোক জমায়েতের উদ্যোগ নেবে।
গত ডিসেম্বর থেকেই ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল ঢাকাসহ সারা দেশে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আসছে। সর্বশেষ ১২ জুলাই ঢাকায় দেড় কিলোমিটারের ব্যবধানে দুটি পাল্টাপাল্টি বড় সমাবেশ করেছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফরের মধ্যে এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ হয়। তবে কোনো সংঘাত বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এখন পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ থাকলেও ভবিষ্যতে একই ধারায় চলবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসবে, বিবদমান দুই রাজনৈতিক পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ততই বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটা সংলাপের পরামর্শও এসেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নিজ নিজ অবস্থানে অটল রয়েছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান মেনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে। শেখ হাসিনার অধীনে ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ছাড়া বিএনপি ও তাদের মিত্ররা নির্বাচনে অংশ নেবে না। এমন মুখোমুখি অবস্থানে থেকে পরপর দুই দিন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালিত হতে যাচ্ছে।
এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সচিবালয়ে নিয়মিত ব্রিফিং এ সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন , একই দিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পদযাত্রার কর্মসূচি রয়েছে। মুখোমুখি অবস্থানে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে কিনা জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘কয়েক দিন আগে দুই দলই দেড় কিলোমিটার দূরত্বে সমাবেশ করেছে, কিছুই হয়নি। সোমবারও হওয়ার সম্ভাবনা নেই, যদি বিএনপি মানুষের ওপর হামলা না চালায়।’
এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল খুলনায় দলীয় সমাবেশে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে দেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সরকার পদত্যাগ না করলে রাজপথেই ফয়সালা হবে।
রাজপথে কিভাবে ফয়সালা হবে তা কিন্তু বিএনপি খোলাসা করছে না। ফয়সালা করতে হলে তো দুই পক্ষকেই এক টেবিলে বসতে হবে। বিদেশিরাও এ দফায় দুই পক্ষকে সে জায়গায় নিতে পারেনি। আগামীতে কি হয় তার অপেক্ষায় থাকতে হবে সবাইকে।
এমএইচএফ