‘২০ হাজার’র বিনিময়ে ২ মাদকসেবীকে ছেড়ে দিল এসআই সুফল!

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ‘২০ হাজার টাকা’র বিনিময়ে আদালতে প্রেরণ না করেই দুই মাদকসেবীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জোরারগঞ্জ থানার এসআই সুফল বড়ুয়ার বিরুদ্ধে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২ টার সময় মাদকসেবীদের পরিবারের কাছ থেকে ওই টাকা আদায় করা হয়। সেই দুই মাদকসেবী হলো : ৩ নম্বর জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড গোপীনাথপুর এলাকার মো. আলাউদ্দিনের ছেলে ইমাম হোসেন (২৪) ও একই এলাকার তজল আহম্মদের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (২৮)।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, জোরারগঞ্জ থানার ৮ নং দূর্গাপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড গোপিনাথপুর এলাকার ইনসাফ যুব সংগঠনের ব্যানারে কিছু লোক বৃহস্পতিবার রাতে দুই মাদকসেবীকে হাতে নাতে মাদকসহ আটক করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেনের মাধ্যমে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। থানার এসআই সুফল ও তার সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থল থেকে কিছু গাঁজা ও তরল মাদকসহ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করার কথা থাকলেও এসআই সুফল মাদকসেবীদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে দরকষাকষির এক পর্যায়ে ২০ হাজার টাকায় দফারফা হয়ে শুক্রবার দুপুরে দুই মাদকসেবীকে থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইনসাফ যুব সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতৃত্ব ও স্থানীয় সচেতন মহল।

গোপিনাথপুর ইনসাফ যুব সংগঠনের দায়িত্বশীলরা জানান, রমজান মাসে মসজিদের কাছাকাছি বসে স্থানীয় দুই যুবক গাঁজা ও তরল জাতীয় মাদক সেবন করছিল। এ সময় মসজিদের মুসল্লি ও গোপিনাথপুর ইনসাফ যুব সংগঠনের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে তাদের আটক করে ইউপি সদস্যের মাধ্যমে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে পরিবারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। পুলিশের এমন কাণ্ডে স্থানীয় ভাবে মাদক কারবারি ও মাদক সেবন মাথাছড়া দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছি আমরা।

হাতেনাতে আটক দুই মাদকসেবী

ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন জানান, মাদকসেবীদের আটক করে আমি নিজেই পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। কিন্তু এখন শুনছি এসআই সুফল টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, পুলিশ জানিয়েছ, মাদকসেবীদের কাছে যে পরিমাণ মাদক পাওয়া গেছে তা আদালতে প্রদর্শন করার মতো নয়, তাই পরিবারের জিম্মায় তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই সুফল বড়ুয়া জানান, আটককৃতদের কাছে কোনো মাদক পাওয়া যায়নি তাই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এসময় তিনি ২০ হাজার টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন। তবে মাদক উদ্ধার ও টাকা নেয়ার প্রমাণ থাকার কথা বলতেই সুর পাল্টিয়ে চায়ের দাওয়াত দেন এই প্রতিনিধিকে।

মাদকসেবী ইমাম হোসেনের ভাই এই প্রতিনিধিকে জানান, তার ভাই ইমাম ও জাহিদুল রাতে মাদক সেবন করার সময় স্থানীয়রা আটক করে পুলিশে দিয়েছে। তাদের ছাড়িয়ে আনতে প্রথমে ৬০ হাজার টাকা চায় এসআই সুফল। পরবর্তীতে শুক্রবার দুপুরে ২০ হাজার টাকায় তাদের ছেড়ে দেয়। টাকা আমি নিজ হাতে দিয়েছি এসআই সুফলকে।

জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হারুনুর রশিদ জানান, তিনি বর্তমানে ছুটিতে আছেন। শনিবার ছুটি থেকে থানায় ফিরে বিষয়টি তদারকি করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।

মিরসরাই সার্কেল এএসপি মনিরুজ্জামান মামুন বলেন, সিগারেট খাওয়ার জন্যতো আর কেউ পুলিশে ধরিয়ে দেয় না। সিগারেট খাওয়ার অপরাধে থানায় আটক করে রাখারও কথা নয়। টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি তদারকি করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।