হজে যাওয়ার স্বপ্ন ভাঙলো চোর

সাড়ে ২৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ প্রায় ১৯ লাখ টাকা চুরি!

মো. জসীম উদ্দিন পেশায় একজন ফার্মেসী ব্যবসায়ী। চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার মৌলভী পাড়ার পীর বাড়ির নুরুল ইসলামের ছেলে। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া ইসলামে পাঁচ স্তম্ভের চার স্তম্ভ পূরণ করে চললেও অন্য স্তম্ভ হজ যথাযত সামর্থ ও পরিস্থিতির কারণে করা হয়নি। তাই দীর্ঘদিনের আশাছিল স্ত্রীকে নিয়ে হজ সম্পাদন করবেন। যেহেতু হজ করতে খরচ দিন দিন বাড়ছে সেহেতু ২০২২ সালে ২৪ এপ্রিল গাউছিয়া ট্রাভেল এন্ড ট্যুর নামে একটি ট্রাভেল এজেন্টে দুই বছরের মধ্যে (২৩-২৪ সালে) হজে যেতে ৬২ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক বুকিং নিশ্চিত করেন। পর্যাপ্ত অর্থ জোগাড় না হওয়ায় গত বছর ২০২৩ সালেও যাওয়া হয়নি হজে। এবছর হজে যাওয়ার জন্য জোগাড় করা ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা বাসার আলমিরাতে গচ্ছিত রাখেন। যার মধ্যে এজেন্টকে দেওয়ার কথা ছিল ১৬ লাখ এবং অন্যান্য খরচের জন্য আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু ভাগ্যের করুণ পরিহাস- গত ১৩ মে রাতে বাসা ফাঁকা পেয়ে ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকাসহ স্ত্রীর সাড়ে ২৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে যায় চোর চক্র। চুরি স্বর্ণালঙ্কারের আনুমানিক মূল্য ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সব মিলে ৩৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার সম্পদ হারিয়ে দিশেহারা এই দম্পতি। শুধুই তাই নয়, এতদিনের লালিত স্বপ্ন ভাঙতে দেখে কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। ফলে অনেকটা বাকরুদ্ধ ও অসহায় হয়ে পড়ে পুলিশের দারস্থ হলে মানবিক পুলিশ সহায়তার হাত বাড়ান এবং মামলা গ্রহণ করে তদন্ত কাজ চলমান রাখে। ঘটনার দুই দিন পর পরোয়ানাভুক্ত রাতুল নামে এক আসামি গ্রেফতার হয় চুরির অভিযোগ করা থানায়। আসামির পকেটে থাকা স্বর্ণের চেইন, আংটি, কানেরদুলসহ ছোট ৫ পদের স্বর্ণ উদ্ধার করে পুলিশ। যা ভুক্তভোগীর অজ্ঞাতজনদের বিরুদ্ধে করা মামলার চুরি হওয়া স্বর্ণের অলংকারের সাথে শতভাগ মিলে যায়। এ যেন অলৌকিকভাবে কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে এলো সাপ! পুলিশের এমন স্বর্ণ উদ্ধারের খবর শুনে কিছুটা স্বস্তি এলেও এখনও অনেকটা হতাশায় কাটছে ভুক্তভোগী পরিবার। তবে শিঘ্রই চুরির রহস্যে উন্মোচন এবং চুরি করা মালামাল উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানান ডবলমুরিং থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ।

গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে চুরির কবলে পড়া বাড়িটিতে গিয়ে দেখা যায়, চার তলা বাড়ির ৩য় তলার জানালার গ্রিল কেটে এবং ঘরের ভেতরে থাকা দুটি আলমিরা খোলা এবং স্টীলের আলমিরার ভেতরের লকার ভাঙা। এ সময় ভুক্তভোগী জসিম উদ্দিন দেশ বর্তমানকে বলেন, বড় ইচ্ছা ছিল আল্লাহ ও নবীর ঘর দেখার। সে জন্য টাকাগুলো এজেন্টকে দিতে বাসায় গচ্ছিত রেখেছিলাম। কিন্তু চোর চক্র আমার সেই পবিত্র স্বপ্ন শেষ করে দিল। এমনকি, সারাজীবনের সঞ্চয় তথা স্ত্রীর প্রায় সাড়ে ২৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কারও নিয়ে যায়।

ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ছোট ছেলে তাহসিনুল ইসলাম কোরআনে হাফেজ হওয়ায় গত ১০ মে ঢাকার এক সংবর্ধনায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন। আমরা বড় ছেলে তানজিমুল ইসলাম এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় পড়াশোনার জন্য বাসায় রেখে যাই। ওইদিন (১৩ মে) রাতে পড়াশোনা শেষে ছেলে দাদা-দাদির কাছে থাকতে নিচ তলায় গেলে আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা চোর চক্র জানালার গ্রিল কেটে আলমিরা ভেঙে বাসায় থাকা সমস্ত স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে যায়।

এসময় নিজের কষ্টার্জিত টাকা ও মূল্যবান সম্পদ চুরি হয়েছে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পরে পুলিশের সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়ায় ধন্যবাদ জানিয়ে দ্রুত চুরি হওয়া বাকি স্বর্ণসহ নগদ টাকা উদ্ধার করে হজে যেতে সহযোগিতা চান তিনি।

গত মঙ্গলবার করা মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, বাসার ভেতরে চোর চক্র প্রবেশ করে বেড রুমের থাকা ২টি আলমিরার দরজা ও ভেতরের লকারের তালা ভেঙে বিভিন্ন ওজনের স্বর্ণের ৪টি নেকলেস, ৮টি কানের দুল, ৪টি হাতের চুড়ি, ৪টি আংটি, ১টি গলার চেইন, ১টি হাতের চেইন, ৩ জোড়া ছোট কানের দুল, ১ জোড়া কানের লম্বা দুল যার সর্বমোট ওজন ২৩ ভরি ৬ আনা যার আনুমানিক মূল্য ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং হজে যাওয়ার জন্য রাখা নগদ ১৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা চুরি হয়ে যায়।

ভুক্তভোগীর ছোট ভাই মো. রাসেল উদ্দিন বলেন, চোর চক্রে জড়িত সকলকে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। অন্যথায় আমার ভাইয়ের মতো আরও অনেকের সারাজীবনের সঞ্চয় কিংবা সম্পদ চোরের পেটে চলে যাবে। আমরা এর থেকে মুক্তি চাই।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সিএমপি ডবলমুরিং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ফজলুল কাদের পাটোয়ারী দেশ বর্তমানকে বলেন, চুরির বিষয়ে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। চোর চক্রকে ইতোমধ্যে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। এর মধ্যে একবার অভিযানও পরিচালনা করি। ফের অভিযান পরিচালনা করে চুরির সাথে সংশ্লিষ্টদের এবং চুরিকৃত মালামাল উদ্ধার করতে চেষ্টা করবেন বলেও জানান থানার এই অফিসার ইনচার্জ।

দেশ বর্তমান/এআই