সিডিএর নতুন ‘চেয়ারম্যান’ খোরশেদ আলম সুজন?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দনের বন্যা

আসন্ন ঈদের পরপরই মেয়াদ ফুরোচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বর্তমান চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের। আগামী ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত তাঁর মেয়াদ রয়েছে। এর মধ্যেই শোনা যাচ্ছে নতুন চেয়ারম্যান হচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক ও ১৪ দল চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম সুজন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সুজনের উদ্দেশ্যে অভিনন্দন বার্তা ভেসে বেড়াচ্ছে। তবে চেয়ারম্যান হওয়া না হওয়ার বিষয়টি রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত করা যায়নি। এদিন দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক কাজী আবুল মনসুর তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাসে লিখেছেন ‘অভিনন্দন সুজন ভাই। নতুন চেয়ারম্যান সিডিএ।’ এই স্ট্যাটাসটিতে কয়েকশ জনের অধিক মন্তব্য ঘরে অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানিয়েছেন।

মুহাম্মদ ইউছুপ নামের একজন লিখেছেন ‘সুজন ভাইয়ের মতো একজন ত্যাগী, গতিশীল ও জনবান্ধব নেতাকে যদি সিডিএ চেয়ারম্যান করা হয়, সেটি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত- যা চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থে আরও অনেক আগে দরকার ছিল।’

এটিএম কামরুদ্দিন চৌধুরী লিখেছেন ‘আলহামদুল্লিাহ। অভিনন্দন। নাগরিক জীবনে গতিশীলতা আনয়নে সুয়্যারেজ, জলাবদ্ধতাসহ সকল মেগা প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে এ ধরনের সাহসী নেতার বিকল্প নেই।’

মো. আজম লিখেছেন ‘এবার কিছু পরিবর্তন আশা করা যায়।’

মাহবুবুর রহমান লিখেছেন ‘ইজ ইট কনফার্ম? রিয়েলি সুজন ভাই ইস দ্যা ইনকমপ্যারাবল পারসোনালিটি টু লিড দ্য সিডিএ’

সৈয়দ ওমর ফারুক লিখেছেন ‘ত্যাগীদের মূল্যায়ন হলে রাজনীতি সচল থাকে, দেশের মানুষের উন্নয়ন হয়, সিডিএ এবার সচল হবে, অভিনন্দন বড় ভাই’

অক্সিজেন এলাকার মো. আলাউদ্দিন লিখেছেন ‘ সুজন ভাই যোগ্য লোক, জয়ের মালা তারই হোক। তিনি দায়িত্ব পেলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রামের দৃশ্যমান উন্নয়ন।’
কাজী মনসুর নামে একজন লিখেছেন ‘অভিনন্দন সুজন ভাই। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে বলবো, অনেক দেরী হয়ে গেছে।’

এই পোস্টে চট্টগ্রামের সাংবাদিক, প্রকৌশলীসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানাচ্ছে। এছাড়াও অনেককে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দিতে দেখা যায়।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বর্তমানে পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে মুঠোফোনে দৈনিক দেশ বর্তমানকে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত (বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত) এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এমনও হতে পারে কেউ রিউমার ছড়াচ্ছে।

যদি প্রজ্ঞাপনে আপনার নাম থাকে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি যেটা করেন সেটা দেশ ও দশের মঙ্গলের জন্য করেন। হয়তো তিনি এটাতে আমাকে যোগ্য মনে করতেও পারেন। নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এটা নিয়ে আমার মন্তব্য করা সমীচিন হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খোরশেদ আলম সুজন বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি ১৪ দলের সমন্বয়ক হিসাবে কাজ করছেন। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনরে প্রশাসক ছিলেন। ১৯৭০ সালে যখন অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী, তখন যোগ দিয়েছিলেন ছাত্রলীগে। রাজনীতিতে ওই পথচলা শুরু খোরশেদ আলম সুজনের। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পথপরিক্রমায় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের আসনেও বসেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া-এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফেরানোর সংগ্রামে ভূমিকা ছিল তার। নব্বইয়ের দশকে দেশ গণতন্ত্রে উত্তরণের পর যুক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে, ছিলেন প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভাবশিষ্য। গভীর রাজনৈতিক জ্ঞানের কারণে আওয়ামী লীগের তাত্ত্বিক নেতা হিসেবেও পরিচিতি ছিল তার।

কখনো রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে, কখনো নাগরিক সংকট সমাধানের দাবিতে বারবার রাজপথই ঠিকানা হয়েছে সুজনের। তিন বার সংসদ সদস্য পদে এবং দুইবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। তবু দমে যাননি। ১৯৯০-৯৮ সালে চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী সংগঠনের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন সুজন। ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দর অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল প্রথম দফায় দুই বছরের জন্য সিডিএ চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ। পরে ২০২১ সালের ২৪ এপ্রিল থেকে আবারও পরবর্তী তিন বছরের জন্য তাকে একই পদে নিয়োগ দেয় সরকার।