লিবিয়ায় জিম্মি বাংলাদেশী ৪ যুবক উদ্ধার, পরিবারে আনন্দ

লিবিয়ায় জিম্মি থাকা নাটোরের গুরুদাসপুরের চার যুবককে উদ্ধার করেছে সেই দেশের সেনাবাহিনী। জিম্মি থাকা চারজনকে উদ্ধারের খবর শুনে চার যুবকের পরিবারে বইছে আনন্দের জোৃয়ার। রোববার (৯জুন) দুপুরে চারজনকে উদ্ধার করেছে লিবিয়ার সেনাবাহিনী। গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ উজ্জল হোসেন জিম্মি থাকা প্রবাসীদের উদ্ধার ও অপহরণকারী চারজনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। উদ্ধার হওয়া চার যুবক হলেন- উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের চরপাড়া পাড়া গ্রামের মোঃ সোহান প্রাং, মোঃ সাগর হোসেন, মোঃ নাজিম আলী ও মোঃ বিদ্যুৎ হোসেন।

প্রবাসী সোহানের মা রুলি বেগম জানান,‘গত ২ জুন তার ছেলেসহ প্রতিবেশী আরো তিন জন প্রবাসী যুবককে লিবিয়ায় অপহরণ করা হয়। তারপর নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে চার জনের জন্য ৪০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় অপহরণকারীরা। সন্তানদের এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পরেছিলেন তিনিসহ তিন প্রবাসীর পরিবার। এরপর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লিবিয়া থেকে তার মোবাইলের ইম্যু নম্বরে তার ছেলে সোহান একটি ভিডিও বার্তা পাঠান। সেখানে সোহান বলে,“আব্বা আমাদের লিবিয়ার স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী অপহরণকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছে। তোমরা চিন্তা করো না। আমরা এখন নিরাপদে আছি।” এমন খুসির খবরে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সকল প্রবাসীর পরিবার ও স্বজনদেও মধ্যে। তিনি সরকার, গণমাধ্যম ও লিবিয়া প্রশাসনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন।

আরো এক প্রবাসী বিদ্যুৎ এর মা বিউটি বেগম জানান,‘তার স্বামী অনেক পূর্বে থেকেই লিবিয়ায় শ্রমীক হিসাবে কাজ করতো। পরবর্তীতে তার ছেলেসহ প্রতিবেশী আরো তিন যুবক এক সঙ্গে লিবিয়ায় যান শ্রমিক হিসাবে। তার ছেলেও অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। অপহরণ হওয়ার পর থেকেই পরিবার ও স্বজনদের আহাজারী থামছিলো না। রোববার তার স্বামী তাকে কল করে জানায় তার ছেলে সহ চারজনকেই লিবিয়ার স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার করেছে। রাতের মধ্যেই তার স্বামীর কাছে হয়তো ফিরে যাবে তার সন্তানসহ প্রতিবেশীদের সন্তানরাও।’

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ উজ্জল হোসেন জানান, লিবিয়ায় জিম্মি থাকা ৪ যুবকের উদ্ধারের ঘটনা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন। সেই খবর চার পরিবারকে জানানো হয়েছে। বর্তমানে তারা সেখানকার সেনাবাহিনীর হেফাজতে রয়েছে। চার যুবকই সুস্থ ও ভালো আছে। নাটোর পুলিশ সুপারের নির্দেশে শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পরিবারগুলোর সাথে থানা পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছে।

উল্লেখ্য যে, প্রায় দুই বছর পূর্বে গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট চরপাড়া গ্রামের মোঃ শাজাহান প্রাং এর ছেলে মোঃ সোহান প্রাং (২০), মোঃ তয়জাল শেখের ছেলে মোঃ সাগর হোসেন (২৪), মৃত-শুকুর আলীর ছেলে নাজিম আলী (৩২) ও ইনামুল ইসলামের ছেলে মোঃ বিদ্যুৎ হোসেন (২৬) লিবিয়াতে কাজের জন্য যান। সকলের পরিবার থেকেই জমি বন্দক, গরু বিক্রি ও ঋণ করে সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। দুই বছরে কাজ করে উপার্জিত প্রতি মাসে ১৫-২০ হাজার করে পাঠিয়েছেন। অভাবের সংসারেও হতদরিদ্র পরিবারগুলো প্রবাসী সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। প্রবাস থেকে উপার্জিত টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন ভেবেই ঋণ করে ছেলেদের বিদেশে পাঠিয়ে ছিলেন।# ১০/০৬/২০২৪ইং