রাউজানে ‘নিষিদ্ধ’ হচ্ছে বিড়ি-সিগারেট

চট্টগ্রামের রাউজানে ‘নিষিদ্ধ’ হতে চলেছে বিড়ি-সিগারেট। দেশে প্রকাশ্যে ধূমপান বন্ধে আইন থাকলেও তা প্রয়োগ নেই বললেই চলে। এবার রাউজানে ধূমপান বন্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নিষিদ্ধ হতে চলেছে বিড়ি সিগারেট। রাউজানের ৬ লক্ষাধিক মানুষের সুস্বাস্থ্যে কথা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি।

তিনি বলেন, ‘তামাকজাত পণ্যের আয়ের চেয়ে চিকিৎসা ব্যয় বেশি। চিকিৎসা খাতে ব্যয়ের পরও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’

গেল ২৬ মার্চ রাউজানে একাধিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় রাউজানে বিড়ি সিগারেট নিষিদ্ধের বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন এই সাংসদ। এই নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে নানা আলোচনা। বেশিরভাগ মানুষ এই সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন করে সরকার। আইনে ‘পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে’ ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়। ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধন করে, ২০১৫ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রকাশ করা হয়। আইন অনুযায়ী, শুরুতে প্রকাশ্যে ধূমপানের জরিমানা ধরা হয় ৫০ টাকা। পরে আইন সংশোধন করে জনসমাগমস্থলে ধূমপানের শাস্তির জরিমানা করা হয় ৩০০ টাকা। ওই আইনে ‘পাবলিক প্লেস’ বলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, গ্রন্থাগার, কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল, ক্লিনিক ভবন, রেস্টুরেন্ট, শিশুপার্ক, মেলাসহ জনসাধারণ কর্তৃক সম্মিলিতভাবে ব্যবহার্য ২৪ ধরনের স্থানকে বোঝান হয়েছে। আর গণপরিবহন বলতে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ ৮ ধরনের পরিবহনকে বোঝানো হয়েছে। কোনো ব্যক্তি দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে তাকে দ্বিগুণ হারে দণ্ডিত করার বিধান রাখা হয়। কাগজে কলমের এই আইন আগে প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি রাউজানে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অংগ্যজাই মারমা বলেন, ‘আমি আসার পর থেকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনে কোনো জরিমানা বা শাস্তি দেওয়া হয়নি। আমরা এখনো মোবাইল কোর্ট করিনাই। আমরা এখন জনগণকে সচেতন করছি। আমরা শীগগিরই একটি ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি।

বিড়ি সিগারেট বেচা-কেনার ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেচা-কেনার বিষয়টি আমি এখন আপনাকে বলতে পারছি না। মিটিং করে আমাদের সিদ্ধান্তে আসার পর বিষয়টি জানানো হবে।’

রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, ‘ধুমপান বিষপানের চেয়েও ক্ষতিকর। কারণ যিনি ধুমপান করেন শুধু তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না। আশপাশের মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধুমপায়ী ব্যক্তিদের কারণে শিশু থেকে সব বয়সী মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধুমপানের প্রভাবে প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে দিন দিন। এজন্য রাউজানে ধুমপান বন্ধের পাশাপাশি দোকানে বেচা-কেনা বন্ধে ব্যবসায়ীসহ সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে ধুমপান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। যারা দোকানদার তাদের বারণ করব, তাদের বুঝাবো যাতে তারা সিগারেট বিক্রি না করে। যে ব্যবসা মানুষের ক্ষতি করে সে ব্যবসা না করাই ভালো উল্লেখ করে তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দোকানদারও রাউজানের। রাউজানের মানুষের কথা সবাইকে চিন্তা করতে হবে। আমরা রাউজানকে মাদকমুক্ত ঘোষণা করবো।’