মুক্তিপণ আদায়ে চার গ্রাম পুলিশের ভয়ঙ্কর অপহরণ ফাঁদ

মো. এরশাদ নামে এক যুবককে অপহরণ করে নির্জন বাগানে নিয়ে গিয়েছিল তিন গ্রাম পুলিশ। মুক্তিপণ হিসেবে পরিবারের কাছে দাবি করা হয় ১ লাখ টাকা। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এরশাদকে উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণের শিকার এরশাদ রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সর্তা গ্রামের মহতের বাড়ীর প্রয়াত আবুল হোসেনের ছেলে।

অপহরণের মূলহোতা রাউজান উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ মো. জুয়েল (৩০)। অপহরণে জড়িত ছিলেন হলদিয়া ইউপির গ্রাম পুলিশ মো. মো. মাসুদ (৪০), ওসমান (৩৫), শাহাজান (৩৫) । মিজান নামে এক সহযোগী রয়েছে তাদের।

অপহরণ পরবর্তী মুক্তিপন হিসেবে ১লাখ টাকা দাবি করা হলেও একটি কল রেকর্ডে অপহৃত এরশাদের স্বজনদের কাছ থেকে সর্বশেষ ২৫ হাজার টাকার রফাদফা করে জুয়েল। কিন্তু বাধ সাধে চিকদাইর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ। মুক্তিপণ দেয়ার আগেই অপহৃত যুবক এরশাদকেসহ দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করতে সক্ষম হয় তারা।

এরশাদের স্ত্রী সেলিনা জানান, গত মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) গৃহপালিত গরুর জন্য ঘাস কাটতে বের হন এরশাদ। হলদিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর সর্তা গ্রামের যাত্রী ছাউনির পাশ থেকে মোটরসাইকেল যোগে উঠিয়ে রাউজান উপজেলার হলদিয়া রাবার বাগানের আমুক্কের টিলার গহীন এলাকায় আটকে রাখা হয়। এরশাদকে পাহারা দেয় মাসুদ। জুয়েল ও শাহাজান এরশাদের শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে টাকা চাইতে থাকে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাজান গ্রাম পুলিশ মাসুদকে। এই পরিচয়ে এরশাদের স্ত্রী ও শ্বাশুড়ীর সঙ্গে একাধিকবার ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। এরশাদের অসহায় স্ত্রী সেলিনা আকতার তার বাপের বাড়িতে গেলে অপহরণকারী গ্রাম পুলিশ জুয়েল এরশাদের শ্বাশুরি হোসেন আরা বেগমের কাছে ১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে উর্ধ্বতন পুলিশকে প্রদান করার কথা বলে। ২৫ হাজার টাকায় মুক্তি দিতে রাজি হয় তারা।

মুক্তিপণ দাবির কল রেকর্ডে জুয়েলের কণ্ঠে শুনা যায়, অপহৃত যুবক এরশাদ তার পরিচিত এক ব্যক্তির কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা আনবেন, আপনারা ১৫ হাজার টাকা জোগাড় করে দিন। অপরপ্রান্তে থাকা এরশাদের শ্বাশুড়ি হোসনে আরা বেগমকে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলতে শুনা যায়, তার নিজের বয়স্কভাতার টাকাসহ যে কোনোভাবে যোগাড় করে দিবে, বিনিময়ে জামাতাকে যেন মুক্তি দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী এরশাদ বলেন, ‘আমাকে অপহরণ করে মোটরসাইকেলে করে নির্জন বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করা হয় ১ লাখ টাকা। টাকা না দিলে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে। থানা পুলিশ কিভাবে জেনেছিল জানিনা। ইফতারের আগমুহূর্তে পুলিশ সেখানে গেলে গ্রাম পুলিশসহ অপহরণকারীরা দুটি মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়। পরে আমাকে উদ্ধার করে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে আমার স্ত্রীর জিম্মায় দেয়া হয়। থানা পুলিশের কথা মতো লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, পূর্বে গ্রাম পুলিশ ওসমান ৬ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছিল।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গেলে অপহরণের মূল হোতা জুয়েল ও শাহাজাকে পাওয়া যায়। কিন্তু সাংবাদিক দেখেই পালিয়ে যায়। তাদের মুঠোফোনও বন্ধ করে দেয়। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইলসাম বলেন, ‘এ ঘটনার পর আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) চার গ্রাম পুলিশকে চাকুরী হতে অব্যহতি দেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি। যেহেতু তারা অপহরণ পরবর্তী মুক্তিপণ দাবি করেছে সেহেতু তারা অপরাধী। তবে এরশাদও একজন খারাপ প্রকৃতির লোক বলে দাবি তার।

চিকদাইর পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) হোসাইন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হলদিয়া রাবার বাগানের গহীন অরণ্যে পুলিশ নিয়ে অভিযান চালনো হয়। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে মো. এরশাদকে রেখে জড়িতরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। পরে মো. এরশাদকে উদ্ধার এবং দুটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছি।

চিকদাইর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবদুল কাদের বলেন, এরশাদকে উদ্ধারের পর তার স্ত্রীর জিম্মায় দেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাউজান থানার ওসি জাহিদ হোসেন বলেন, ‘পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে। তিন গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত অপহরণের মূলহোতা গ্রাম পুলিম জুয়েল নিরিহ মানুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। অভিযুক্ত চার গ্রাম পুলিশের মোটরসাইকেল রয়েছে। পাহাড়ার নামে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে তারা।