ভাড়াটে সন্ত্রাসী ‘ব্ল্যাক শামীম’ টাকা পেলে সব করে!

৫ মামলার আসামি শামীম আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিল ৩ বার

ছাত্রলীগের রাজনীতি করা শামীম আজাদ ওরফে ব্ল্যাক শামীমকে টাকা দিলে মানুষ খুনসহ যেকোনো অপরাধ করতে প্রস্তুত। শামীম চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পাহাড় কাটা, হুমকি দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের হওয়া অন্তত ৫ মামলার আসামি। ভোটের দিন অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছুড়ে ফের আলোচনায় এসে এই শামীম ফের র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার।

পুরো নাম শামীম আজাদ মুন্না। তবে চট্টগ্রাম শহরে ‘ব্ল্যাক শামীম’ হিসেবেই বেশি পরিচিত। পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে হলেও থাকেন নগরীর খুলশী এলাকায়। মূলত সে একজন ভাড়াটে সন্ত্রাসী।

মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় র‍্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। সে মিরসরাই থানার সায়েরখালী গ্রামের আবুল কালাম আজাদের পুত্র।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গ্রেপ্তার শামীম একজন চিহ্নিত চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এবং বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিল। শুধু এসব কর্মকাণ্ডই নয়, তার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটা, হুমকি প্রদান্সহ বিভিন্ন অপরাধের তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। এসব অপকর্মের জন্য তার বিরুদ্ধে এর আগে ৫টির অধিক মামলা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কর্তৃক তিনি ইতোপূর্বে তিনবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। তিনবারই তিনি জামিনে এসে তার অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। তিনি মূলত ৭ জানুয়ারি পাহাড়তলী এলাকায় নির্বাচনের সুষ্ঠ পরিবেশ বিঘ্নিত করার জন্য তার নেতৃত্বে আরও কিছু অস্ত্রাধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে কেন্দ্রের সামনে আধিপত্য বিস্তার, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা বা সহিংসতা ঘটান। তিনি ভোট কেন্দ্রের সামনে নিজে বিদেশি পিস্তল দিয়ে প্রতিপক্ষকে এলোপাথারি গুলিবর্ষণ করেন। তার গুলিতেই শান্ত এবং জামাল নামে দুইজন ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হন।’

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার শামীমের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হয়। সেই মামলায় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। তিনি ঘটনার পর মামলা হলে সীতাকুণ্ডের পাহাড়ে আত্মগোপনে যান। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তার অবস্থান নিশ্চিত করলে তিনি সেটি বুঝতে পেরে অন্য স্থানে আত্মগোপনের জন্য সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু এর আগেই সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।’

সে কার পক্ষে কাজ করেছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একজন সন্ত্রাসীর পরিচয় সে একজন সন্ত্রাসী। গ্রেপ্তার ব্ল্যাক শামীমের পরিচয় সে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং চাঁদাবাজ। সে বিভিন্ন সময় অর্থের বিনিময় ভাড়ায় খেটে বিভিন্ন অপকর্ম করেছে। আমরা তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছি। সে মূলত কার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে ভোটের দিন অপকর্ম বা এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করেছে—এ সংক্রান্ত তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করছি। নির্বাচনের দিন সে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছেন এবং দু’জনকে গুরুতর আহত করেছেন। সেখানে ভিকটিম যে মামলা দায়ের করেছেন সেখানে উল্লেখ আছে, তিনি (শামীম) স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অর্থাৎ ফুলকপি মার্কার প্রার্থীর (মঞ্জুর আলম) পক্ষে কাজ করছিলেন। এই বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি এবং আমরা তদন্ত করছি।’

‘তাকে কিন্তু আমরা ইতোপূর্বে তিনবার আটক করেছি। তিনবারই তিনি কারাভোগ করে জামিনে বের হয়ে এসেছেন। পরবর্তীতে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পরিচয়ে তার যে মূল উদ্দেশ্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে আসছিলেন। এ ঘটনায় আর কেউ তাকে উস্কে দিয়েছিলেন কিনা বা আর কেউ জড়িত কিনা সে বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। আমরা যদি আর কারও সংশ্লিষ্টতা বা মদদদাতা পাই তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব।’

যে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এটি নির্বাচনের দিন ব্যবহার করা অস্ত্র কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘এটি অবৈধ অস্ত্র। আমরা যে অস্ত্রসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছি সেটির সাথে নির্বাচনের দিন ব্যবহার করা অস্ত্রের অনেকটাই মিল রয়েছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানিয়েছেন, এটি সেই অস্ত্র নয়। এটা অন্য একটি অস্ত্র। এটি আসামির নিরাপত্তার জন্য তার পাশে রেখেছিলেম। কিন্তু এই অস্ত্র সেই অস্ত্র কিনা, এটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য কিছু ফরেনসিক চেক আছে। সেটি করলে আসলে আমরা জানতে পারব এই অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছিল নাকি অন্য অস্ত্র দিয়ে।’

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যারা নির্বাচনে সহিংসতা করেছে বা পরিবেশ বিঘ্নিত করার চেষ্টা করেছে তারা যে হোক তাদের সকলকে তুদন্ত সাপেক্ষে আইনের আওতায় আনা হবে।’

এর আগে, গত ৭ জানুয়ারি খুলশীর পাহাড়তলী কলেজ এলাকায় নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলাকালীন সময়ে সকাল সাড়ে ১০টায় পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজ এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে প্রতিপক্ষকে গুলি ছোড়েন। আর সেই ঘটনায় শান্ত বড়ুয়া (৩০) ও মো. জামাল (৩২) নামে দুইজন গুরুতর আহত হন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামীম আজাদ ওরফে ব্ল্যাক শামীম ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। এছাড়াও তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত।