ঈদুল আজহায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রধান ইবাদত হজ, ঈদের নামাজ ও কোরবানি। এ ঈদ ঘিরে প্রতিবছরই দৌড়ঝাঁপ করতে হয় পশুর হাট-বাজারে। রাজধানীতে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভিড় জমে গাবতলী পশুর হাটে। এবার ঈদ উপলক্ষে গাবতলী হাটের প্রস্তুতিও প্রায় শেষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে কোরবানির পশু। কেনা-বেচাও শুরু হয়েছে, তবে তা খুচরা ক্রেতা নয়; পাইকার, কসাই ও সাপ্লাই প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পশু বিক্রি হচ্ছে এখন।
হাট মালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ১০-১৫ দিন আগেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাটগুলো সাজানোর প্রস্তুতি নেন ইজারাদাররা। গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটের পাশে অস্থায়ী হাটের প্রস্তুতিও শেষপর্যায়ে।
বেপারিরা বলছেন, হাট কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতি থাকলেও এখনও জমেনি অস্থায়ী সেড। ক্রেতা সমাগম কম থাকায় কোরবানির হাট লক্ষ্য করে শ্রম-মমতায় লালনপালন করা গরু-ছাগল এখনই আনছেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা। তবে হাটের স্থায়ী শেডে বেচাকেনা চলছে। ব্যবসায়ীদের আশা, আগামী শুক্রবার থেকে পুরোদমে জমে উঠবে এ পশুর হাট। তখন ক্রেতাদের চাহিদামতো নামবে কোরবানির পশু। এবার মাঝারি দামের পশু টার্গেট করে লাভের আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী স্থায়ী পশুর হাটের পশুর শেড বিভিন্ন রঙের ত্রিপলে সাজানো হয়েছে। ধোয়ামোছার কাজও চলছে। গতানুগতিক আঙ্গিকেই সাজানো হচ্ছে প্রধান ফটক। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ও র্যাবের জন্যও বসানো হয়েছে উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। তবে এখনও ব্যাংক কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য বুথ তৈরি হয়নি। বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে অস্থায়ী হাট।
কথা হয় মানিকগঞ্জ সিংগাইরের বেপারি আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরুর সাইজ অনুযায়ী দাম। টুকটাক কেনা-বেচা হচ্ছে। আমি মাত্র চারটা গরু এনেছি। সোয়া লাখ থেকে পৌনে দুই লাখের মধ্যে দাম।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত ঈদে মাঝারি সাইজের গরুর বেশি চাহিদা ছিল। সেটা এবারও টার্গেট। এবার গরুর দাম পাবেন বেপারিরা, যদি সীমান্তে ভালোভাবে মনিটরিং করা যায়। কারণ ভারত থেকে গরু আসলে দাম কমে যাবে।’
হাটের স্থায়ী সেডে কথা হয় যশোরের বেপারি সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গতকাল ১৭টা গরু এনেছিলাম। এরমধ্যে ১৩টা বিক্রি করছি। বাকি আছে ৪টা। বড় পার্টি হাটে ঢুকছে। তারা ক্যান্টনমেন্ট, গুলশানে সাপ্লাই দিচ্ছে। কসাইরাও কিনছে গরু।’
কুষ্টিয়ার গরু ব্যবসায়ী খোরশেদ মিয়া বলেন, ‘লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এবার গরুই তো কম। দেশি ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বরাবরই বেশি।’ তবে হাটে ছাগল বেশি ওঠেনি। ২৫ জুনের পর জমবে হাট।
গাবতলীর অস্থায়ী পশুর হাটের ম্যানেজার আবুল হাশেম বলেন, ঈদকেন্দ্রিক হাটের প্রস্তুতি শেষপর্যায়ে। ঈদের আর মাত্র ক’দিন বাকি। ইতোমধ্যে পুলিশ কন্ট্রোল রুম, ওয়াচ টাওয়ারের কাজ শেষ। ১১টি হাসিল ঘরের মধ্যে ৮টির নির্মাণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। হাট জমলে বাকি তিনটাও সম্পন্ন হবে। চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বরগুনা, নাটোর, মেহেরপুর, রাজশাহী, পাবনা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানের ৬০ জন বড় বেপারি ইতোমধ্যে শেড বরাদ্দ নিয়েছেন। সেগুলোর কাজও প্রায় শেষ।
তিনি জানান, এবার হাটের হাসিল লেখার জন্য লোক নিয়োগ করা হয়েছে ৪০০ জন। স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে দুই বেলা মিলে ৮০০ জন। স্থায়ী টয়লেট কিছু আছে। অস্থায়ীভাবেও কিছু বসানো হবে। গত কোরবানির ঈদে ছাগল, গরু, ভেড়া, মহিষ মিলে বিক্রি হয়েছিল ২০ হাজারের বেশি পশু।
হাট কবে থেকে পুরোদমে জমে উঠবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গাবতলী হাটে প্রতিদিনই বেচাকেনা হয়। তবে আগামী শুক্রবার ঈদের বেচাকেনা জমবে পুরোদমে।’
এআই