পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় হিন্দুদের ‘রাজাকার’ বলল পৌর মেয়র জহুর

পছন্দের প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ) আসনে বসবাসকারী সনাতনীদের একটি অংশ ‘নতুন রাজাকার’ বলে আখ্যা দিলেন বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম জহুর। নির্বাচন পরবর্তী এক সামাজিক অনুষ্ঠানে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কুমার কিষানকে ভোট না দেওয়ায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় পাশে ছিলেন এই স্বতন্ত্র প্রার্থী। বক্তব্যটি একটি রেফারেন্স হিসাবে এবং এর খণ্ডিত অংশ দাবি অভিযুক্ত মেয়রের।

সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে বলতে দেখা যায়, এই নির্বাচনে আমরা দেখেছি সনাতনী ধর্মের অনেক লোক তারা ৭১ রাজাকারের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছে এবং এই প্রাপ্তির বিরোধিতা করেছে। ‘আমি আজকের এই দিনে অত্যান্ত তাদের প্রতি ঘৃণা জ্ঞাপন করছি, কারণ আজকে যদি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমরা চাই, যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছেন এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজকে দিনরাত পরিশ্রম করতেছেন। আমরা এই বোয়ালখালীতে চট্টগ্রাম-৮ আসনে একটি ইতিহাস সৃষ্টি করতে চেয়েছিলাম। আমরা সেইজন্য দলমত নির্বিশেষে সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাবু বিজয় কিষানকে বিজয়ী করার জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ভিতর এই সনাতনী ধর্মের কিছু লোক যারা উচ্চ বর্ণের বলে নিজেদেরকে দাবি করে তারা তাঁর (বিজয় কুমার কিষানের) বিরোধীতা করার কারণে আমরা আমাদের সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে পারি নাই। সেটা আমি মনে করিনি সনাতন ধর্মের মানুষের জন্য একটা দুঃখজনক ঘটনা। আজকে যদি সেটা করতে পারতাম তাহলে এই চট্টগ্রামে একটা ইতিহাস সৃষ্টি হতো। সেই ইতিহাস আমরা সৃষ্টি করতে পারি নাই, তাই আমি আপনাদের প্রতি বিনয়ের সাথে অনুরোধ করবো আপনারা সকলেই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন কারন মুক্তিযোদ্ধার চেতনায় অর্জিত বাংলাদেশ এই বাংলাদেশ আমার আপনার সকলের এই দেশে সকল ধর্মের সকল মানুষ একসঙ্গে সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর আলোকেই তাঁর একজন যোগ্য উত্তরসূরী কর্মী হিসাবে আমরা আমাদের এই বোয়ালখালী পৌরসভায় সকল সম্প্রাদায়ের মানুষকে সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্যকাজ করে যাচ্ছি। আমি আপনাদের সকলের আর্শিবাদ চাই।’

গত মঙ্গলবার ‘চট্টগ্রাম ৮ সংসদীয় আসন’ নামের ফেসবুক পেইজে আপলোড দেওয়া ভিডিওটির মন্তব্যের ঘরে বেশ কয়েকজন মন্তব্য করেন। যেখানে একজন মেয়র হিসাবে এভাবে প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়া সমীচিন নয়সহ সমালোচনা করে নানান জন নানা মন্তব্য করতে দেখা যায়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিও বক্তব্য বিষয়ে জানতে চাইলে বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম জহুর বুধবার বিকালে দেশ বর্তমানকে বলেন, ‘যারা এগুলোর করতেছে সবগুলো মুসলমানের ছেলে, একটা হিন্দুর ছেলেও এটা করতেছে না।’

তিনি বলেন, ‘আমার খণ্ডিত অংশ কেটে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমার মানহানি করছে একটি চক্র।’

বক্তব্য’র কোন অংশ বাদ পড়েছে প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে এই পৌর মেয়র বলেন, ‘১৯৭১ সালে এই দেশের সকল মানুষ মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে ছিল, কিছু কিছু মানুষ মুক্তিযোদ্ধের বিরোধিতা করেছে। এই নির্বাচনে সনাতন ধর্মের অনেক মানুষ পক্ষে ছিল। কিছু কিছু মানুষ তাঁর (বিজয় কুমার কিষানের) বিপক্ষে ছিল মূলত এটাই বলতে চেয়েছি।’

চট্টগ্রাম-৮ আসনের সদ্য নির্বাচিত সাংসদ আব্দুচ ছালামের মন্তব্য নিতে চাইলে, তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সদ্য নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কিষান বলেন, ‘নিজেদের অপকর্ম ডাকতে আরেক জনের আবেগী বক্তব্যকে ভাইরাল করছে। তারা ফাইভ স্টার , টু-স্টার হোটেলে বসে এগুলো করছে। যদি এতে দোষের কিছু থাকে তাহলে রাজনৈতিক ফ্লাট ফর্মে বলুক।’

প্রসঙ্গত, গত ৭ জানুয়ারী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে সিডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধাক্ষ্য আব্দুচ ছালাম স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসাবে কেটলি প্রতীকে বিজয় লাভ করেন। তার নিকতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ফুলকপি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কিষান। মূলত বিজয় কিষানকে ভোটে সমর্থন করেছিল বোয়ালখালী পৌরসভার মেয়র জহিরুল হক জহুর।

দেশ বর্তমান/জেএইচই/এআই