নির্বাচন ঘিরে তিন স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

২ হাজার ২৩ কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১ হাজার ৪৮৮টি

দরজায় কড়া নাড়ছে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে প্রার্থীদের প্রচারণার পাশাপাশি চলছে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি। চট্টগ্রামে ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯২৫ জন ভোটারের জন্য ভোট কেন্দ্র রয়েছে ২ হাজার ২৩টি। যার মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ (তথা ঝুঁকিপূর্ণ) ১ হাজার ৪৮৮টি। ফলে ৭৪ ভাগ ভোটকেন্দ্রকে গুরুতপূর্ণ (তথা ঝুঁকিপূর্ণ) হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিশেষ করে জেলার ১ হাজার ৩৬৩টি কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১ হাজার ৪২টি। এছাড়া মহানগরে ৬৬০টির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৪৪৬টি। সবচেয়ে বেশি কেন্দ্র আছে চট্টগ্রাম জেলায়। নয়টি আসন পূর্ণাঙ্গ এবং চারটি নগরের সঙ্গে আংশিক। এবার অধিক ঝুঁকি বিবেচনায় কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তায় এরইমধ্যে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা পুলিশ ও নগর পুলিশ। পাশাপাশি সর্তক রয়েছেন জেলা ও নগরের দুই রিটার্নিং কর্মকর্তা।

গতকাল সোমবার দুপুরে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ক্রেডিবল ইলেকশন নিশ্চিত করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে তিনটি পূর্ণাঙ্গ ও চারটি সংসদীয় আসনের আংশিক অবস্থান। এগুলোর মধ্যে ৬৬০টি কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। অতীত অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ভৌগলিক অবস্থান এবং প্রভাবশালী প্রার্থীর বাসাবাড়ি বিবেচনায় নিয়ে ৪৪৬টি কেন্দ্র অধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাড়ে ৪ হাজার পুলিশ ফোর্সের পাশাপাশি অস্ত্রধারী আনসার এবং মোবাইল টিম, থানা এবং কন্ট্রোলরুমে স্ট্রাইকিং টিম থাকবে। সোয়াত, বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডের কে-নাইন ইউনিটকেও স্ট্রাইকিং হিসেবে রাখা হবে।

নির্বাচনে প্রধান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে পুলিশের পাশাপাশি তাদের সহযোগী সংস্থাগুলোও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে। ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে নিরাপদে যেন ভোট দিতে পারেন সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান নগর পুলিশ কমিশনার।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থীদের আচরণবিধি তদারকির জন্য চট্টগ্রামে ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে জরিমানা ও সতর্ক করেছেন তারা। নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৯৬ প্লাটুনের প্রায় ১ হাজার ৯২০ জন সদস্য, র‌্যাবের ৩২ প্লাটুনে প্রায় ৭৫০ জন, ৮ হাজার পুলিশ সদস্য, কোস্টগার্ডের ১৫০ জন, আনসার-ভিডিপির ২৪ হাজার ২৭৬ জন সদস্যসহ ২ হাজার ২৩টি কেন্দ্রে সর্বমোট ৩৫ হাজার ৬৫৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও আগামীকাল ৩ জানুয়ারি থেকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নামছে সেনাবাহিনীর ৫০০ সদস্য। এর বাইরে সাধারণ কেন্দ্রে অস্ত্রধারীসহ ৩ জন পুলিশ ও ১২ জন করে আনসার সদস্য থাকবেন।

গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, ভোট সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এবারের নির্বাচনে চট্টগ্রামে ১৬ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন। যেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন সিনিয়র সহকারী জজ এবং যুগ্ম জেলা জজের মত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ভোটের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে সর্বমোট ৭৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। ফলে কোন সংঘাত সংঘর্ষে জড়ালে কোনো ছাড় পাবে না। এছাড়াও চট্টগ্রামের ২ হাজার ২৩টি ভোটকেন্দ্রে ২৫ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন বলেও জানান চট্টগ্রামের এই জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার এস এম শফিউল্লাহ সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানান, ‘চট্টগ্রামে ১৩৬৩টি কেন্দ্রে রয়েছে। তার মধ্যে ৪০ শতাংশ কেন্দ্র অতি গুরুত্বপূর্ণ, ২০ শতাংশ কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ এবং বাকি কেন্দ্রগুলো সাধারণ। এসব মাথায় রেখে আমরা কেন্দ্র্রগুলোতে নিরাপত্তার ছক সাজাবো। আশা করি এখানে কোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা হতে দেব না’।

এছাড়া নির্বাচনে বৈধ বা অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধে কঠোর নজরদারি রাখছে পুলিশ প্রশাসন। সংঘাত বা সহিংসতা রোধে কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে প্রার্থী এবং সমর্থকদের প্রতি।