চট্টগ্রাম-১০ আসনে কে হবেন পরবর্তী কাণ্ডারী

লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ৪ দিন। সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও আটঘাট বেঁধে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন প্রত্যেক প্রার্থী। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীরা। তবে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই আলোচনার জন্ম দিচ্ছে চট্টগ্রাম-১০ (হালিশহর-পাহাড়তলী-খুলশী) আসন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৮, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ২৪, ২৫, ২৬ এই আটটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৫ হাজার।

এবার নৌকার প্রার্থীসহ ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় মাঠে আছেন ১০ প্রার্থী। কে হবেন এই আসনের পরবর্তী কাণ্ডারী তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। মাত্র পাঁচ মাস আগে উপনির্বাচনে জয়ী হওয়া এই আসনের বর্তমান সাংসদ মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু। এবারও নির্বাচনে তিনি নৌকার মাঝি। তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে মাঠে আছেন হঠাৎ নির্বাচনী মাঠে ফেরা স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম। এই দুজনের পাশাপাশি কিছুটা আলোচনায় আছেন দল থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া মহানগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ। কেউ কেউ ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস দেখলেও মূলত প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে বর্তমান সাংসদ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর সঙ্গে ফুলকপি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলমের।

২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন মনজুর আলম। সেবার নির্বাচনের দিন ভোট বর্জন করে আর কখনও রাজনীতি করবেন না বলে ঘোষণা দেন এই ব্যবসায়ী। এরপর দীর্ঘ আট বছর ধরে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। এবারের তফসিল ঘোষণার পর আচমকা দৃশ্যপটে হাজির হন ১৭ বছরের কাউন্সিলর ও পাঁচ বছর মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালন করা মনজুর আলম। অবসরের দীর্ঘ ৮ বছর পর হঠাৎ ভোটের মাঠের প্রচার প্রচারণায় স্বভাবতই বিষয়টি সামনে আনছেন বাচ্চুর সমর্থিত অনুসারীরা। তাদের ভাষ্য, মনজুর এক সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন বলে প্রচার থাকলেও দল পাল্টে বিএনপিতে যাওয়া এবং আবারও বিএনপি ছেড়ে আসার পর তার রাজনৈতিক পরাজয় হয়ে গেছে। তাছাড়া উনি দীর্ঘ সময় পুরো শহরের নেতৃত্বে ছিলেন। তখন কতটুকু কাজ করেছিলেন সেগুলো মানুষের মনে আছে। রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে হঠাৎ করে কেনো আবার এই আসনের এমপি হতে চাচ্ছেন, সেটা মানুষ বুঝে। মনজু সাহেব বার বার দল পাল্টেছেন, আট বছর রাজনীতি থেকে দূরে থেকে কোন ইন্টারেস্ট থেকে আবার প্রার্থী হচ্ছেন সেটাও প্রশ্ন রাখেন অনেকেই।

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুকে জেতাতে শুরু থেকেই মাঠে আছেন সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতারা। প্রথমবার এমপি হওয়ার পর অল্পদিন সময় পাওয়ায় বাচ্চুর প্রতি ভোটারদের কিছুুটা সহানুভুতি থাকতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

তবে দীর্ঘ সময় ধরে নানা উদ্যোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশে থাকা ও দানশীল ব্যক্তি হিসেবে মনজুরের সুনাম আছে। এই আসনে ভোটারদের কাছে টানতে সুযোগ থাকায় প্রচার প্রচারণায় প্রচুর লোক সমাগম দেখা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি এই আসনের ১০ নং ওয়ার্ডে ১৭ বছর কাউন্সিলর ও পাঁচ বছরের মেয়রের দায়িত্ব পালন করায় এই স্বতন্ত্র প্রার্থী।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ আসনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভোটের লড়াই হবে নৌকা ও ফুলকপির প্রার্থীর সঙ্গে। দুজনরে মধ্যে সেয়ানে সেয়ানে রড়াই হবে। প্রতীক নৌকা হওয়ায় বর্তমান সাংসদ স্থানীয় আওয়ামী লীগ অঙ্গ সংগঠনের যেমন সমর্থন পাবেন তেমনি সাবেক মেয়র হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী ও স্থানীয় ভোটারদের অনেক ভোট পাবেন। ফলে এই দুজনের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে।

জানতে চাইলে গতকাল মঙ্গলবার বর্তমান সাংসদ ও নৌকার মাঝি মহিউদ্দিন বাচ্চু দেশ বর্তমানকে বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমার নির্বাচনী এলাকার সকলেই নৌকাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন বলে বিশ্বাস করি। তাছাড়া গনসংযোগসহ নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম বলেন, আমি সেবা করতে এসেছি। তাই অত্র এলাকার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিবেন। তিনি প্রচার প্রচারণায় বিপুল ভোটারের সমর্থন পাচ্ছে বলে জানিয়ে বলেন, আগামী ৭ জানুয়ারী ফুলকপি প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে কামিয়াব হওয়ার সুযোগ দিবেন।