কোকাকোলার বিজ্ঞাপন নিয়ে সমালোচনার ঝড়

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি হামলার জেরে বিশ্বব্যাপী ইসরাইলি পণ্য বয়কট চলছে। কয়েক মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোমল পানীয় কোকাকোলা বয়কটের ডাক ওঠে। বয়কটের মুখে বিক্রি কমে যায় এক সময়ের জনপ্রিয় পানীয় কোকাকোলার। তবে সময়ের সঙ্গে যখন মানুষ ভুলতে বসেছে বয়কটের কথা ঠিক তখনই কোকাকোলা বাংলাদেশের একটি বিজ্ঞাপন যেন ফের উস্কে দিয়েছে সবকিছুকে।

কোকাকোলা বাংলাদেশের একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। বিজ্ঞাপনটিতে মডেল হিসেছে ছিলেন অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন, শিমুল শর্মা, আব্দুল্লাহ আল সেন্টু প্রমুখ। এছাড়া কোকাকোলা বয়কটের পাশাপাশি অভিনয়শিল্পীদের বয়কটের হুমকি দিয়েছেন নেটিজেনরা। বিভিন্ন গ্রুপ থেকে শুরু করে অনেকে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে বয়কটের ডাক দিয়েছেন। বিজ্ঞাপনটির নির্মাতা ও বিজ্ঞাপন সংস্থা সম্পর্কে বিজ্ঞাপনে কোনো তথ্য জানানো হয়নি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিনয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনটি নির্মাণের পেছনেও রয়েছেন শরাফ আহমেদ জীবন।

বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়—কোককে সবাই যে দেশের পণ্য মনে করছে, আসলে সেই দেশের পণ্য নয় কোকাকোলা। মানুষ সঠিক তথ্য না জেনেই কোকাকোলা বয়কটের ডাক দিয়েছে। ১৯০টি দেশের মানুষ কোক খায়। এমনকি ফিলিস্তিনে কোকাকোলার ফ্যাক্টরি রয়েছে। তাই বিভ্রান্ত না হয়ে গুগলে সার্চ দিয়ে নিশ্চিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বিজ্ঞাপনটিতে।

এছাড়া বিজ্ঞাপনটির একটি চরিত্রের নাম সোলেমানকে তু‌র্কি খলীফা ‘সুলতান সোলেমান’ বলেও কটাক্ষ করা হয়েছে বলে অভিযোগ নেটিজেনদের।বিজ্ঞাপনটি সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারে আসার পর থেকে সমালোচনার মুখে পড়েছেন অভিনয়শিল্পীরা। তাদের বয়কটের হুমকি দিয়েছেন নেটিজেনরা।

 

আলোচনা-সমালোচনার মাঝেই কোকাকোলা তাদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে বিতর্কিত বিজ্ঞাপনের ভিডিওটি সরিয়ে নিয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে তাদের ইউটিউব চ্যানেলে ভিডিওটি আর দেখা যাচ্ছে না।

এদিকে তোপের মুখে পড়ে ওই বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করার বিষয়ে মুখ খুলেছেন অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন এবং শিমুল শর্মা। সোমবার রাতে অভিনেতা শরাফ আহমেদ জীবন তার ফেসবুক আইডিতে এক পোস্ট করে দাবি করেছেন যে তিনি ইসরাইলের পক্ষে কোন কাজ করেননি।

পোস্টে শরাফ আহমেদ জীবন বলেন, ‘আমি একজন নির্মাতা এবং অভিনেতা হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। বিগত দুই দশক ধরে আমি নির্মাণ ও অভিনয়ের সাথে জড়িত। সম্প্রতি কোকা-কোলা বাংলাদেশ আমার সাথে তাদের একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ এবং অভিনয় করার জন্য নিয়োগ করেছিলো। আমি শুধুমাত্র তাদের দেয়া তথ্য ও উপাত্তই কাজটিতে তুলে ধরেছি।

বিজ্ঞাপনটি প্রচার হবার পর থেকে আমি আপনাদের অনেক মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করছি এবং আপনাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি আবারো বলতে চাই কাজটি শুধুই আমার পেশাগত জীবনের একটি অংশমাত্র। ব্যক্তিগত জীবনে আমি সবসময় মানবাধিকার বিরোধী যেকোনো আগ্রাসনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছি এবং আপনাদের অনুভূতি ও মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেছি। এখানে আমি কোথাও ইসরাইলের পক্ষ নেইনি এবং আমি কখনোই ইসরাইলের পক্ষে নই। আমার হৃদয় সবসময় ন্যায়ের পক্ষে এবং মানবতার পাশে আছে, থাকবে।’

অন্যদিকে মঙ্গলবার সকালে অভিনেতা শিমুল শর্মা তার ফেসবুক আইডিতে এক পোস্ট করে ক্ষমা চেয়েছেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘আমি শিমুল শর্মা। যদি ও পরিচয় দেবার মত একজন অভিনেতা এখনো হয়ে উঠতে পারিনি কারণ একজন অভিনেতা হবার জন্য যে অধ্যাবসায় এবং দূরদর্শিতা দরকার সেটা এখনো আমার হয়ে উঠেনি, আমি চেষ্টা করছি মাত্র। তাই হয়তো না বুঝে করা আমার কাজ আজ আমার দর্শক, তথা আমার পরিবার ও দেশের মানুষকে কষ্ট দিয়েছে।

আর আমি ভবিষ্যতে কোন কাজে অভিনয় করতে গেলে অবশ্যই আমাদের দেশের মূল্যবোধ, মানবাধিকার, মানুষের মনোভাবকে যথেষ্ট সম্মান দিয়ে বিবেচনা করে তারপর কাজ করবো। আমি মাত্র আমার জীবনের পথচলা শুরু করেছি, আমার এই পথচলায় ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন এবং আমাকে ভবিষ্যতে একজন বিবেকবান শিল্পী হয়ে ওঠার জন্য শুভ কামনায় রাখবেন ।
ধন্যবাদ সবাইকে