এমপি মোস্তাফিজের পর এবার বির্তকে নদভী, বিব্রত আওয়ামী লীগ

সম্প্রতি দায়িত্বরত পুলিশ প্রশাসনকে শিষ্টাচার বর্হিভূত কথা বলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে চট্টগ্রামের দুই সাংসদ। সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সর্মথকদের তালিকা অনুযায়ী (নিজের দেওয়া) গ্রেফতার না করলে ‘২০-৩০টা মার্ডার হয়ে যাবে’ মন্তব্য করে পুলিশকে শাসিয়েছেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনের নৌকার প্রার্থী ও সাংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। এর আগে নিজের অনুসারীদের আটক করলে ‘পুলিশ সদস্যের হাত কেটে ফেলা’র হুমকির অডিও ভাইরাল হয়ে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেন চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সাংসদ সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। এদিকে, দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন আচরণে ক্ষুদ্ধ ও বিব্রত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।

গতকাল শনিবার পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ৫৭ সেকেণ্ডের এক ভিডিওতে সাংসদ আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীকে বলতে দেখা যায়, ‘এখন আমার কথা হল যে- আপনারা সাত্তার সাহেব, শিবলী নোমান, ইউনুস সাহেব, আপনারা আমাকে দুইটার মধ্যে একটা কথা বলেন, কালকে থেকে আমরাও কি মাঠে নেমে যাব মারামারিতে? মাঠে নেমে যাব কি-না? আমাদের সাথে পারবে না, কিন্তু ২০ থেকে ৩০ জন মার্ডার হয়ে যাবে। করব নাকি, আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন’।

তিনি বলেন, ‘আপনারা আসতেছেন সামরিক সচিব টেলিফোন করার পরে। সামরিক সচিব টেলিফোন করা মানে বুঝেন তো। আমাকে বিভাগীয় কমিশনার সাহেব বলেছেন, ডিসি সাহেব বলেছেন, ডিআইজি মিনা সাহেব বলেছেন- সামরিক সচিব কড়া অর্ডার দিয়েছে। এখন আপনারা কি করবেন না করবেন? এই যে তালিকা দিয়েছি, এই তালিকার যদি পুরো গ্রেফতার না করেন, তাহলে কালকে…’। এর পরে কি বলেছেন সেটার ভিডিও চিত্র পাওয়া যায়নি।

সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার দিবাগত রাতের ঘটনা এটি।

ভিডিও’র বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী আবু রেজা মো. নেজাম উদ্দিন নদভীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি কেটে দেন। ফলে ভিডিওর বিষয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে, এর আগের দিন ভাইরাল হওয়া এক অডিওতে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ও বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদের মধ্যে কথোপকথনের রেকর্ডে শোনা যায়-

এমপি মোস্তাফিজ: আপনি কি বাড়িতে পুলিশ পাঠিয়েছেন?
ওসি তোফোয়েল: স্যার কোথায়, স্যার?
এমপি মোস্তাফিজ: ছনুয়া (বাঁশখালী), পুলিশের হাফিজ গেছে…
ওসি তোফোয়েল: না না, স্যার ও-তো এখন নেই। ও থাকে ২টা পর্যন্ত। ও-তো চলে আসছে স্যার।
এমপি মোস্তাফিজ: কী জন্য গেছে?
ওসি তোফোয়েল: ওইটা-তো আমাদের নিয়মিত ডিউটি করার জন্য, প্রত্যেক বিটে বিটে একটা করে…
এমপি মোস্তাফিজ: আমার কোনো লোককে যদি হাত দেয়, হাত কেটে ফেলব কিন্তু। এটি বলে দিলাম..
ওসি তোফোয়েল: হাত দিবে না স্যার, দিবে না স্যার। আমি এখনই বলে দিচ্ছি।
এমপি মোস্তাফিজ: ওইখানে নাকি আমাদের লোক ধরার জন্য হাফিজ গেছে..। আমাদের আলমগীর একটা আছে ওনাকে খুঁজতেছে।
ওসি তোফায়েল: ও-তো নাই স্যার। চলে আসছে-তো স্যার অনেক আগে।
এমপি মোস্তাফিজ: এমনি ঘুরেফিরে থাক। অসুবিধা নেই। আমার কোনো লোকজনের ওপর হাত দিলে, বহুত অসুবিধা হবে।
ওসি তোফায়েল: অবশ্যই স্যার। আপনি যেভাবে বলবেন ওইভাবে হবে। প্রশ্নই আসে না, হাত দিবে না স্যার।
এমপি মোস্তাফিজ: আপনি-তো আমার ঘরেও পুলিশ পাঠিয়েছেন।
ওসি তোফায়েল: ওইদিন-তো স্যার আপনার সঙ্গে কথা বললাম। পুলিশ পাঠাইনি স্যার। ওই… ওরা আপনার বাড়িতে এমনি নিয়মিত টহল দিতে গেছে। তাও সাদা পোশাকে, যাতে কেউ চিনতে না পারে। বিষয়টি স্যার আপনাকে ডিটেইলস বলছি। আরও আমি আপনার সম্মান বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেছি। সাদা পোশাকে পুলিশ পাঠিয়েছি। কাউকে ধরার জন্য যায়নি স্যার।
এমপি মোস্তাফিজ: চাম্বলের মুজিবের (চেয়ারম্যান মুজিবুল হক) ওপরও যেন কোনোকিছু না হয়।
ওসি তোফায়েল: হবে না স্যার, হবে না। ইনশাআল্লাহ…

এসময় এমপির কথার জবাবে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে দেখা যায় বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদকে।
চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে এমপি মোস্তাফিজের কথোপকথনের অডিওটি গেল বৃহস্পতিবারের বলে জানা গেছে।

দুই নৌকা প্রার্থীর এমন আচরণে দল বিব্রত বলে জানিয়ে গতকাল বিকালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, দায়িত্বশীল পদে থেকে এ ধরনের অর্বাচিন, অপরিপক্ষ ও শিষ্টাচার বর্হিভূত আচরণে দল বিব্রত। এমন আচরণকারীদের ভবিষতে দলকে মুক্ত করার কথাও বলেন তিনি।

দেশ বর্তমান/এআই