ঈদুল আযহার বাকী আর মাত্র কয়েক দিন, আর এরই মাঝে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কামারেরা। সাধারণ মানুষেরও ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে এসব দোকানগুলোতে। সারা বছর দা-ছুরি নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন দৌড় ঝাঁপ দেখা না গেলেও; কোরবানীর ঈদ এলেই দা-ছুরির বিশেষ প্রয়োজনীয়তা দেখা যায় মানুষের মাঝে। চাহিদা বাড়ায় পশু জবাইয়ের বড় ছুরি ও চামড়া ছাড়ানোর ছোট ছুরি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। তবে লোহা, কয়লাসহ দা-ছুরি তৈরির আনুষাঙ্গিক সব কিছুর দাম বাড়ায় এবার দাম কিছুটা বেশি বলে জানান এ শিল্পে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী, ফিরিঙ্গী বাজার, দেওয়ানহাট, হালিশহরসহ, ২নং গেইটসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। জানা যায়, এবছর প্রতিটি চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ২৫০-৩৫০ টাকা, প্রতি পিস বটি ৬৫০-৮৫০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৮০০-১২০০ টাকা, প্রতি পিস কুড়াল ৭৫০-৮০০ টাকা, কাটারি ২৫০-৩০০ টাকা, চাপাতি ৭০০-১২০০ টাকা ও হাঁসুয়া ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
পাহাড়তলী এলাকার কামার অনীল নাথ বলেন, সারা বছর খবর না থাকলেও, কোরবানের মৌসুমে আমাদের ব্যবসা তুলনামূলক ভালো হয়। অনেক রকম অর্ডার থাকে, তাই ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। অর্ডারের পাশাপাশি দা, ছুরি, বটি ধারও দিয়ে থাকেন তারা। তবে গতবারের চেয়ে এবার দাম কিছুটা বেশি এমনই জানান তিনি। এদিকে দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, কয়েক বছর আগেও লোহার কেজি ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। দ্বিগুণ দাম বেড়ে বর্তমানে প্রতিকেজি লোহা কিনতে হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। শুধু তাই নয়, বছর তিনেক আগেও প্রতিবস্তা (৮০ কেজি) কয়লা হাজার টাকায় কেনা যেত। গতবছর প্রতি বস্তা কয়লা ১২০০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ১৫০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তাই দা-ছুরি বানানোর খরচও কিছুটা বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে দাম বেশি নিতে হচ্ছে।
একই বিষয়ে নগরীর দেওয়ানহাট এলাকার সততা কর্মকার স্টোরের মালিক মিলন কর্মকার বলেন, কারিগরদের মজুরি খরচ এখন আগের চেয়ে বেড়েছে। এ দোকানের দুজন কারিগর আছে; প্রতিজনকে দৈনিক ৮০০ টাকা করে মজুরি দিতে হয়। তার উপর লোহা ও কয়লার দাম বেড়েছে। বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। তাই এবার সরঞ্জামের দাম আগের তুলনায় কিছুটা বাড়তি বলে জানান তিনি। এদিকে নগরীর ২নং গেইট মোড়ে ক্রেতা মো. সোহেলের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে কামাররা জিনিসপত্রের দাম আরো বাড়িয়ে দিচ্ছেন। পাঁচ মাস আগেও ভালো মানের একটি ছুরি ২৫০ টাকায় কিনেছিলাম। এখন তিনশ টাকার বেশি দাম হাকাচ্ছে। পুরনো দা-ছুরি ধার দেওয়াতেও বেশি দাম চাইছেন কামাররা।
এসময় ফিরিঙ্গী বাজার এলাকায় মো. শাজাহান বলেন, কয়েক বছর আগে একটি ধামা, একটি কুড়াল, দুটি ছুরি, একটা বড় ছুরি ও একটি বটি কিনেছিলাম মোট ২২০০ টাকায়। এ বছর নতুন করে বানাতে আসলাম, কিন্তু কামার সাড়ে তিন হাজার টাকা চাইছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে হাটে-মাঠে-ঘাটে সব কিছুর দামই এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি বলে জানান তিনি।
ঈদের আগমুহূর্তে এমনই ব্যস্ততা বেড়ে যায় কামারবাড়িতে। হাঁপরের বাতাসে কয়লায় পোড়ানো হয় লোহা। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে তৈরি করা হয় দা-ছুরি, বটি-ধামা ইত্যাদি। করোনায় লকডাউনের বিধি-নিষেধে গত তিন বছর ব্যবসায় ভাটা ছিল কামারদের। তবে এ বছর জোয়ার ফিরেছে এ শিল্প বা ব্যবসায়। এ পরিস্থিতিতে ঈদের আগের এক সপ্তাহকে টার্গেট করেছেন তারা। অতীতের লোকসান কাটিয়ে এবার ভালো ব্যবসা হবে এমনই আশা করছেন চট্টগ্রামের কামার ব্যবসায়ীরা।
এমএইচএফ