রোহিঙ্গাদের কাজের সুযোগ দিতে পারব না

আল জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী

জাতিসংঘের আয়োজিত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলনে যোগ দিতে মার্চের প্রথম সপ্তাহে কাতারে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  এই সম্মেলনের ফাঁকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেন।  শনিবার (১১ মার্চ) সাক্ষাৎকারটি প্রচার করেছে সংবাদমাধ্যমটি।  সেখানে রোাহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘যখন রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়, রোহিঙ্গারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছিল…তাদের প্রতি আমাদের মায়া কাজ করে।  এরপর আমরা আমাদের সীমান্ত খুলে দেই…তাদের আসতে দেই।  তাছাড়া মানবিক দিক চিন্তা করে আমরা তাদের বাসস্থান এবং চিকিৎসা দেই।’

প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও কথা বলতে থাকে বাংলাদেশ।  তবে, ‘দুঃখজনকভাবে তারা ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়নি।  তাদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে, কিন্তু এটি খুবই কঠিন।  আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করেছি।  ভাসান চর থাকার জন্য খুবই ভালো জায়গা।  বাচ্চাদের জন্য আমরা খুবই সুন্দর বাড়ি এবং অসাধারণ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।’

এরপর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক আগুন নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।  যে ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা বাসস্থান হারিয়েছে।  তিনি বলেছেন, ‘আসলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা খুব ভালো নয়।  রোহিঙ্গারা একে-অপরের সঙ্গে মারামারি করছে।  তারা মাদক, মানব ও অস্ত্র পাচারের মতো বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে।’

এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর ইউক্রেন এবং ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের দিকে চলে গেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

সাংবাদিক নিক ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন রোহিঙ্গাদের কাজ করার ব্যবস্থা বা সুযোগ করে দেবেন কিনা।  এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের অনেক সুবিধা দিলেও এটি তিনি করতে পারবেন না।  কারণ সেখানকার স্থানীয় বাংলাদেশিরাই ভালো নেই।  এছাড়া রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশে থাকলেও, তারা অন্য দেশের নাগরিক।  বাংলাদেশে হলো তারা শরণার্থী।

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী নিক ক্লাক স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি নিয়েও কথা বলেন।  তিনি জানান, করোনার আগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ যা প্রায় চীনের সমান ছিল।  বর্তমানে ঢাকার জিডিপির পরিমাণ ভারতের চেয়ে বেশি।  এছাড়া বাংলাদেশে পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং মেট্রো চলার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

উন্নতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘শুনুন।  আসলে বাংলাদেশে… আমাদের সম্পদ সীমাবদ্ধ।  কিন্তু আমি একটি কথা বলতে পারি… আমাদের মানুষ খুবই ভালো।  কিন্তু এটি নির্ভর করে নীতির ওপর।  আমরা যা করেছি সেটি হলো একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে নিয়েছি।  স্বল্পমেয়াদী, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদি পকিরল্পনা।’

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এবং এর ওপর নির্ভরতার কথা বলেছেন নিক ক্লাক।  তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, তৈরি পোশাক খাত ছাড়া বাংলাদেশ আরও কোনো কিছুর ওপর জোর দিচ্ছে কিনা।

এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের প্রধান প্রাধান্য বিষয় ছিল, আমাদের সম্পদের মাধ্যমে খাদ্য বাড়ানো।  আমাদের লক্ষ্য ছিল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ রপর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা…চাকরির ব্যবস্থা করা।  আমি যা করেছি তা হলো সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি।  হ্যাঁ সরকারি খাতও আছে।  কিন্তু আমি প্রায় সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি।  আমরা আমাদের মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেছি, বিদেশিদের, সঙ্গে নিজ দেশের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি।  আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনের ইস্তেহারে বলেছিলাম, বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।  মানে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে গুরুত্ব দেব।  এখন পুরো বাংলাদেশে ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে।  সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে মানুষের কাছে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি।  এখন আমরা নিজেরা বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছি।  আমি আপনাকে বলতে পারি এখন প্রত্যেকটি বাড়িতে মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে।’