পুরোনো তিক্ত সম্পর্ক জোড়া লাগাচ্ছে ভারত-মালদ্বীপ। পুরোনো দ্বন্দ্ব ভুলে পারস্পরিক বন্ধুত্ব জোরদারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দুই দেশই। পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু স্ত্রীসহ দিল্লি আসেন রোববার।
সোমবার প্রথানুয়ায়ী রাষ্ট্রপতি ভবনে তাকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা জানানো হয়। সেসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী রন্দ্রে মোদির সঙ্গে দুই নেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। এরপর বেলা ১টায় দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র বিস্তারে কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
টাইমস অব হিন্দুস্তানের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে ৪০০ মিলিয়ন মুদ্রা বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
মুদ্রা বিনিময় চুক্তি হিসাবে ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে মুইজ্জু। একাধিক এই চুক্তির মধ্যে রাজনৈতিক, উন্নয়ন, ব্যবসা, স্বাস্থ্যসহ বেশকিছু খাত অন্তর্ভুক্ত।
এর আগে রোববার ভারতে আসার পর দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। দুজনে এক দফা আলোচনাও হয়। সোমবার সকালে মুইজ্জু যান রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে।
গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মুইজ্জু। তার নির্বাচনী প্রচারের অভিমুখে ছিল ভারত বিরোধিতা। তার নির্বাচনী স্লোগানই ছিল ‘আউট ইন্ডিয়া’। চীনপন্থি বলে পরিচিত এই নেতা জয়ের পর প্রথামাফিক প্রথম বিদেশ সফরে ভারতে না এসে বেছে নিয়েছিলেন তুরস্ক। তারপর তিনি যান চীন। জেতার পরই তিনি মালদ্বীপে অবস্থানরত ৮৮ ভারতীয় সেনাকে ফেরত যাওয়ার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেন। ভারত সেই দাবি মেনে সেনা সরিয়ে নেয়। যদিও তার আগে থেকেই সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলতে মুইজ্জু সচেষ্ট হন।
তবে রোববার দ্বিপাক্ষীয় সফরে এসে মুইজ্জু বলেন, ‘ভারতের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করে এমন কোনো কাজ মালদ্বীপ কখনও করবে না এবং নয়াদিল্লিকে সবসময় মূল্যবান অংশীদার এবং বন্ধু হিসাবে মনে করে মালে।’
রোববার ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান মোহাম্মদ মুইজ্জুকে। তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানোর পর মুইজ্জু মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এরপর তিনি হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেন। মুইজ্জ চীনের নাম উল্লেখ না করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার বিষয়ে তার প্রশাসনের উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি তার ‘মালদ্বীপ ফার্স্ট’ নীতির কথা তুলে ধরে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বৈচিত্র্য আনা এবং যে কোনো একটি দেশের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানো মালদ্বীপের জন্য প্রয়োজন। তবে তিনি নিশ্চিত করেন যে, এই ধরনের উদ্যোগ ভারতের স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ করবে না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের প্রতি শ্রদ্ধা আমাদের ডিএনএর মধ্যে আছে।’ এছাড়াও তিনি ভারতীয় পর্যটকদের তার দেশে আসার আহ্বান জানান। বলেন, ভারতীয়রা তাদের পর্যটনে ইতিবাচক অবদান রাখে। ভারতীয় পর্যটকদের স্বাগত জানাই। পর্যটন মালদ্বীপের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত; যা গত বছর ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক বিবাদে হুমকির মুখে পড়েছিল।
অন্যদিকে এই সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সমস্যাযুক্ত সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের জন্য একটি ‘নতুন অধ্যায়’ শুরু হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপের জনগণের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য ভারত সবসময় পাশে থাকবে।’
মোদি আরও বলেন, ‘উন্নয়ন অংশীদারিত্ব আমাদের সম্পর্কের একটি গুরত্বপূর্ণ স্তম্ভ। আমরা সবসময় মালদ্বীপের জনগণের অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য দিয়ে আসছি। আমাদের প্রতিবেশী নীতি ও সাগর ভিশনে মালদ্বীপের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ভারত সবসময়ই মালদ্বীপের জন্য প্রতিক্রিয়াকারীর ভূমিকা পালন করছে।’