বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে আজ ভোর থেকে টানা ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় অবস্থিত সিটি মেয়রের বাড়িসহ নিম্নাঞ্চল। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মূলসড়ক, অলিগলি পানিতে ডুবে ছিল। বাসা-বাড়িতেও পানি ঢুকে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ভোগান্তি। এ যেন বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বর বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন অফিসগামী ও শ্রমজীবীরা। বন্ধের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না থাকায় নগরীতে অনেক স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। শিশুদের স্কুলে পৌঁছাতে অভিভাবকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। এদিকে পানিবন্দি বাসায় বেশ কয়েকঘণ্টা আটকে পড়েছিল খোদ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তবে বিকেল গড়াতেই চকবাজারসহ কয়েকটি নিম্নাঞ্চল ছাড়া অনেক এলাকা থেকে পানি সরে যায়। জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীকে মুক্ত রাখতে কাজ চলছে বলে জানান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে, যা ভারি বর্ষণ বলে জানান আবহাওয়া অফিস। এর আগে গতকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস ২০৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, চকবাজার, হালিশহর, আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, বাকলিয়া, প্রবর্তক মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত পানিতে ডুবে ছিল। এতে ছোট তিন চাকার যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। বাস, প্রাইভেট কারসহ বড় যানবাহন চলাচলেও বেগ পেতে হয়েছে।
নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা শফিউল আলম দেশ বর্তমানকে বলেন, আমার বাসার ভেতরে কোমর পানি। রাস্তায়ও একই অবস্থা। বাসার প্রায় সব আসবাবপত্র পানিতে ডুবে আছে। বাসা পানিতে ডুবে থাকায় রান্না-বান্না হয়নি। আটকে আছি পানিতে।
নগরীর হালিশহর এলাকার বাসিন্দা শোয়েব কবির বলেন, ভোর থেকে পানিতে ডুবে আছি। মনে হচ্ছে উপকূলীয় এলাকায় আছি, যেখানে সাগরের জোয়ারের পানিতে ভাসছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে এতটাকা সরকার খরচ করছে তবু আমরা এর থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছি না।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে নগরীর মুরাদপুর এলাকা সকাল থেকেই বুক পরিমাণ পানিতে অনেকটা তলিয়ে ছিল। বড় গাড়িগুলোকেও যাতায়াতে ব্যাপক বেগ পোহাতে হয়েছে। উপায় না পেয়ে কোমর পানিতেই নেমে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতেও দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে।
হালিশরের অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন কার্যালয়ও পানিতে থইথই ছিল। নগরীর বহদ্দারহাটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবন যথারীতি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির জন্য মেয়র বাসা ছেড়ে বের হতে কয়েক ঘণ্টা দেরী করে অফিসে পৌঁছাতে হয়েছে। এসময় বাসার সামনে জমে থাকা পানি মোটর দিয়ে সড়কে ফেলতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমী বলেন, টানা ভারি বৃষ্টির কারণে পানি জমে থাকছে। আমরা কয়েকটি টিম করেছি। তারা জমে থাকা পানি দ্রুত অপসারণে কাজ করছে।
চট্টগ্রাম নগরীর পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন জায়গাও প্লাবিত হয়েছে। সীতাকুণ্ড, রাউজান, লোহাগাড়া ও ফটিকছড়ি উপজেলার বেশকিছু এলাকায়ও বৃষ্টির পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে চট্টগ্রামে ব্যাপক বর্ষণ ও জোয়ারের কারণে বেশকিছু জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু জায়গায় সকালে পানি থাকলেও এখন নেই। বৃষ্টি কমলেই পানি কমে যাবে।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দেশ বর্তমানকে বলেন, জোয়ারের পানির কারণে বৃষ্টির পানি নদীতে নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। বিকেল থেকে বেশীরভাগ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। মেয়র মহোদয়কে সাথে নিয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা পরিদর্শন করেছি। যেখানে দুই নম্বর গেইট, মুরাদপুর বহদ্দারহাটসহ বেশীর ভাগ এলাকায় পানি নেই। তবে চকবাজার এলাকায় এখনও পানি আছে। আমাদের টিম কাজ করছে। আশাকরি বাকি এলাকার পানিও শীঘ্রই নেমে যাবে। এছাড়া আমাদের নগরবাসীকে সর্তক হতে হবে। যেসব খাল পরিদর্শন করেছি সব জায়গায় বাসার ব্যবহার্য ময়লা আবর্জনা দেখা গেছে যা খাল থেকে পানি অপসারণ হতে প্রতিবন্ধকতা হিসাবে কাজ করছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, রোববার রাত ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ তথা কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে। মধ্যরাত নাগাদ কেন্দ্রটি উপকূল অতিক্রম শেষ করে। এরপর ঘূর্ণিঝড়টির নিম্নভাগ উপকূল অতিক্রম শেষ করেছে সোমবার ভোর নাগাদ। এখন এটা স্থল নিম্নচাপ আকারে বৃষ্টি হয়ে ঝরছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।