মেলা মানেই হাজার হাজার মানুষের সমাগম। ছোট-বড়, যুবক-বৃদ্ধাসহ নানা বয়সী মানুষের সমারহে গমগম করে মেলার পরিবেশ। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন মেলা পরিদর্শন কিংবা কেনাকাটার উদ্দেশ্যে। তবে, এবার এক ভিন্ন চিত্র চোখে পড়ে চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়। উদ্বোধনের পর থেকেই মেলা নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীরা। বন্ধের দিনগুলো ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণে চোখে পড়ে না সেই চিরচেনা ভিড়। জনপ্রতি ২০ টাকা টিকিট কেটে ভেতরে প্রবেশ করলেও মেলার অবস্থা দেখে হতাশ হচ্ছেন দর্শনার্থীরাও।
এদিকে মেলায় দর্শনার্থী ও লোকসমাগ কম থাকায় বেচা-বিক্রি নিয়ে চরম বিপাকে ব্যবসায়ীরা। লাভের আসায় মেলায় দোকান ভাড়া নিলেও এখন লাভের চাইতে লোকসানের পরিমাণটাই বেশি।
সরেজমিনে চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় দিনই সকাল থেকে দুপুর আবার কখনো সন্ধ্যা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ অনেকটাই ফাঁকা থাকে। বর্তমানে রোজার মাস হওয়ায় ইফতারের পর থেকে বাড়তে থাকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়। তারপরও যেন লাভের মুখ দেখছেন না মেলায় অংশ নেয়া ব্যবসায়ীরা।
বিক্রেতারা বলছেন, দিনের বেলা মেলা একদম ফাঁকা থাকে। তবে ইফতারের পর লোকসমাগম বাড়লেও বেচাবিক্রি একদম নেই বললেই চলে।
তারা আরও বলেন, মেলায় লোকজন ঘোরাফেরার পাশাপাশি ছবিও তুলছেন, তবে কেউ কেনাকাটা করছেন না।
মেলা ঘুরে আরও দেখা যায়, বেশির ভাগ ব্যবসায়ীর মুখে হতাশার ছাপ। ব্যবসায়ীরা লোকসান কমাতে মরিয়া। গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ও বেচা বিক্রি বাড়াতে দোকানগুলোতে আছে বাহারি সাজসজ্জা ও বিশেষ ছাড়। তারপরও হচ্ছেনা আশানুরূপ বিকিকিনি।
ঢাকার ব্যবসায়ী পাইলট শাহ। তিনি বেশ আশা নিয়ে মেলায় একটি স্মোক বিস্কুটের দোকান দিয়েছিলেন। মেলার শুরুর দিকে কিছুটা বেচা-বিক্রি হলেও বর্তমানে তার ব্যবসা সম্পূর্ণ লোকসানে যাচ্ছে। বেশ হতাশা নিয়ে পাইলট শাহ দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, আমার দোকানে দৈনিক পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার খরচ আছে। তবে খরচের তুলনায় বিক্রির পরিমাণ খুবই কম। গেল তিনদিনে আমার দোকানে বিক্রি হয়েছে আট হাজার, ছয় হাজার ও তিন হাজার ৬০০ টাকা। এতোদিন নিজের গায়ের ওপর থেকে ব্যবসা চালিয়েছি। এখন আর সম্ভব না। তাই লোকসান কমাতে ব্যবসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ঠিক এমনি দশা মেলায় অবস্থিত লাভ রেস্টুরেন্টের। রেস্টুরেন্টের স্বত্তাধিকারী মাইনুদ্দিন হাসান জাবেদ বলেন, আজকের দিনে আমার বিক্রির পরিমাণ ১১ হাজার টাকা। তবে আমার ৫ জন স্টাফের বেতন ও অন্যান্য খরচসহ দৈনিক খরচ ১৫ হাজার টাকা।
তার পাশেই একটি পাঞ্জাবির দোকান। যার তিনদিনে বিক্রি হয়েছে চার হাজার দুইশ টাকা। অন্য একটি পাঞ্জাবির দোকানের বিক্রি তিনদিনে ২২ হাজার টাকা। শরিফ মেলামাইনের বিক্রি তিনদিনে সাত হাজার টাকা।
পাঞ্জাবির দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন আরিফ। তিনি দেশ বর্তমানকে বলেন, লোকজন দোকানে এসে দাম জানতে চান, এরপর চলে যান। বিক্রি হয়েছে সামান্য।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ আয়োজিত ৩১তম ‘চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (সিআইটিএফ)’ শুরু হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। ১৬ মার্চ মেলার পর্দা নামার কথা থাকলেও ২৬ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে এ মেলা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা খোলা থাকে মেলার ফটক।
এবারের মেলায় চার লাখ বর্গফুটের সিআইটিএফে ১৬টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ৫৬টি প্রিমিয়ার স্টল, ৯৪টি গোল্ড, ৪৮টি মেগা স্টল, ১১টি ফুড স্টল ও ৩টি জোনে ৪০০ স্টলে তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড, ইরানের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা পণ্য প্রদর্শন করছেন।