বশির হোসেন খান
এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে সাংবাদিক মোরশেদুল আমিন শাহিনের বই ‘খেরোখাতা’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আবু সালেহ টিটু। বইটি প্রকাশ করেছে ক্লাব এইটি ফাইভ প্রকাশনা। এই বইটিতে রয়েছে আত্মজীবনী মূলক নিয়ে একটি জীবন দর্শনের কাবিক্য আলখ্য।
বইটির প্রথম অংশে লেখা আছে, একজন মানুষকে জোয়ার-ভাটা অবিরাম তাড়িত করে। বাংলার নিম্নাঞ্চলের নদী-নালা-খালের কাদা-মাটি তার শরীরে আস্তর ফেলে। সেই মাটি কখনও দলদলে, আবার চৈত্রের শুকনো মৌসুমে ফেটে চড়চড় করে। বৈশাখের চিলতে বৃষ্টি সেখান থেকে সোঁদা গন্ধ ছড়িয়ে মানুষটিকে ক্রমে আচ্ছন্ন করে ফেলে। নিজের ভেতর ক্রমাগত ভ্রমণে, জীবনের টানা আর পোড়েনে, সেই মানুষ খণ্ড খণ্ড বুনে চলে শৈশব-কৈশোর-যৌবনের কথকতা। পাকদণ্ডীতে পার হওয়া এক একটি জীবনের কত গল্প দলাপাকিয়ে থাকে বুকের ভেতর। মনটা পালাই পালাই করতে করতে কখনও যাদুর ঝাঁপি উপর করে দেয়… খেরোখাতা খুব গুছিয়ে বলা আত্মজীবনী নয়। যাদুকরের হ্যাট থেকে বের হওয়া নানান উপাচার, তার ভেতর দিয়ে আমরা স্বাদুতায় ভরা এক জীবনে অনেক জীবন দেখতে থাকি।
শেষ অংশে আছে প্রমিথিউসের মত অসংখ্য বার জন্ম নিতে হয়েছে সময়ের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্যে। স্বর্গ থেকে আগুন চুরির কোন দায় ছিল না। তবে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার অসম যুদ্ধে কখনো জিততে জিততে হেরে যাওয়া আবার হারতে হারতে জিতে যাওয়া। প্রতিদিন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাটিয়ে অপেক্ষায় থাকে রাতের পূর্ণতা পাওয়ার আশায়। বেঁচে থাকে প্রমিথিউস। বেঁচে থাকি আমি আর আমার যুদ্ধ। চূড়ান্তভাবে ভেঙেচুড়ে যাবার পরেও জীবন আবার উঠে দাঁড়ায়। দীর্ঘ খরা তাপদাহেও সজনে লতা নুয়ে পড়ে না। অতল বেদনা ও ভয়ানক বীভৎসতার অভিজ্ঞতা থেকেও আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছি অনেকবার। অসংখ্য প্রতিকূলতা আর বিপর্যয়ের পাশে সতর্কতার দেয়াল তুলে আম্মার স্নেহের অকুণ্ঠ প্রেরণা নিয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়েছি। জীবনের মানে নতুন করে গড়তে শিখি । প্রজাপতির মত সব অন্ধকার গিলে খেয়ে নতুন রঙের আবির ছড়িয়ে আলোকিত করি। অন্ধকার কে ঢেকে দিয়ে নতুন আলোয় প্রভাত নিয়ে আসি। আলোর পালক খুঁজে ফেরা অজানা পথের পথিক।
গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের হাজারো প্রাণের ঐকতান এর ৭৭৭ নাম্বার স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ‘খেরোখাতা’ বইটি। এর দাম রাখা হচ্ছে ৭০০ টাকা।
২০২৩ এর একুশের বই মেলায় মোরশেদুল আমিন শাহিনের প্রথম কবিতার বই ‘বিমূর্ত সময়’ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। মোরশেদুল আমিন শাহিন জন্মের সংবাদ উপহার পেয়েছিলো পরিবার থেকে। ইংরেজি হিসেবে আমার জন্ম ১৯৬৮ সনের ৪ মার্চ। বরিশালের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। লেখালেখি স্কুল জীবন থেকে। বিবিসি, ভয়েস অফ অ্যামেরিকা, ডয়চে ভেলে, আরো সব বিদেশী রেডিও ক্লাবে চিঠি লেখাই তার প্রথম লেখালেখি। বরিশাল শহরে এসে কলেজে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ সময় কাল দৈনিক দক্ষিণাঞ্চলে নিয়মিত কাজের সময় লেখালেখি শুরু করলেও সেই সব লেখা একদম হারিয়ে ফেলেন তিনি। অনলাইন ব্লগ আর ফেসবুকের জন্যে নতুন করে কিছু লেখা শুরু করি ২০১৪-২০১৫ সাল থেকে। সেখান থেকে কিছু কবিতা প্রকাশের জন্য এই কাব্যগ্রন্থে প্রকাশ করা হয়েছে।
লেখক মোরশেদুল আমিন শাহিন ‘খেরোখাতা’ বইটি তার দাদা আব্দুল হাই মোল্লা ও নানা মৌলভী আবুল বাসার সরদারকে উৎসর্গ করেন। তিনি বলেন, আমাদের পরিবারিক ঐতিহ্যের প্রতীক, যার আদর স্নেহে পুষ্ট আমার ছেলেবেলা আমার শ্রদ্ধেয় দাদা।
জীবনের মূল উদ্দেশ্য খোঁজার উৎসাহ দিয়েছেন তিনি। আমার বড় হয়ে উঠার মূলে রয়েছেন যিনি, যাপিত জীবনের শিক্ষাগুরু আমার শ্রদ্ধেয় নানা মৌলভী আবুল বাসার সরদার। দুই শ্রদ্ধাভাজনদের উৎসর্গ করলাম বইটি।