চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি’তে অবস্থিত বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতাল। যা রেলে কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত প্রায় ১৫ হাজার কর্মীর চিকিৎসাস্থল। তবে হাসপাতালের দুরাবস্থা দীর্ঘদিনের। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের আনাগোনাও তেমন একটা চোখে পড়ে না। নামে হাসপাতাল হলেও রোগী এবং চিকিৎসকের অভাবে জরাজীর্ণ ও মাকড়সার জালে পরিপূর্ণ বিভিন্ন কক্ষ। এ যেন হাসপাতালটি নিজেই অসুস্থ!
রেলওয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে কিংবা অন্যকোন রোগে আক্রান্ত হলে ছুটে যান চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় অন্য হাসপাতালে।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ১১০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে ৪টি সাধারণ কেবিন ও ২টি ভিআইপি কেবিন রয়েছে। রয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ অপারেশন থিয়েটার। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে সেটিও এখন বন্ধ।
নেই পর্যাপ্ত নার্স। হাসপাতালটির জন্য ২২ জন চিকিৎসক বরাদ্দ থাকলেও প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ও বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা মিলিয়ে আছেন মাত্র ৪ জন। তার মধ্যে একজন ডেন্টাল সার্জন ও অন্যজন গাইনি বিভাগের চিকিৎসক। নার্স বরাদ্দ ১৬ জন হলেও আছে ৪ জন। এর মধ্যে সবাই জুনিয়র নার্স। এ সকল কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রেলওয়ে কর্মচারি ও তাদের স্বজনদের।
চিকিৎসক ও নার্স স্বল্পতার পাশাপাশি হাসপাতালের অন্যতম একটি বড় সমস্যা পানির সংকট। হাসপাতালে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ‘হাসপাতালে সঠিক সময়ে পানির সাপ্লাই হয় না। সপ্তাহে দু-একদিন আসে। তাও আবার কোনদিন সকালে, আবার কোনদিন বিকেলে। তারও কোন ঠিক ঠিকানা নেই।’
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরও বলেন, এমনিতেই সব সময় পানি পাওয়া যায় না। আবার যেটুকু আসে তাও ব্যবহারের অনুপোযোগী।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরীক্ষার স্বার্থে পানির নল ছাড়তেই বেরিয়ে আসছে ভারি আয়রণ যুক্ত লাল রঙের পানি। যা প্রথম দেখে যে কেউই শরবত ভেবে ভুল করবেন।
হাসপাতালের প্রধান সহকারি জিয়াউর রহমান দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, হাসপাতালে এই পানির সমস্যা দীর্ঘদিনরে। আমাদের স্যাররা বারবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এই সকল সমস্যার কথা জানিয়েছেন, তবে এতবার বলার পরও এর কোনো সূরহা হয়নি।
পূবার্ঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শিবু নাথ দৈনিক দেশ বর্তমানকে বলেন, রেলের অনেক কর্মচারী কাটা-ছেঁড়া ও মাঝে মাঝে হাড় ভাঙ্গা নিয়ে আসেন। তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও সরঞ্জামের অভাবে আমরা তাদের চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হয়ে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে হয়।
তবে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে প্রথমবারের মতো বসেছে তিনটি ডিজিটাল এক্সরে মেশিন। এছাড়াও রেলের স্টাফরা বিনামূল্যে করাতে পারবে ১৬ ধরণের ব্লাড টেস্ট।
অপারেশন থিয়েটার চালুর বিষয়ে ডা. শিবু নাথ বলেন, অপারেশন থিয়েটার চালু করতে হলে আগে আমাদের জনবলের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। হাসপাতালে ২২ জন চিকিৎসকের বরাদ্দ থাকলেও আমরা আছি মাত্র ৪ জন। সর্ব শেষ ২০১৩ সালে রেলওয়েতে চিকিৎসক নিয়োগ হয়েছিল। এরপর এখন পর্যন্ত আর কোনো নিয়োগ হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের একটি পূর্ণাঙ্গ অপারেশন থিয়েটার আছে। তবে হাসপাতালে কোনো সার্জন নেই, তাই ভারী কোনো অপারেশন এখানে হয় না। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি, আমি নিজেও চাই অপারেশন থিয়েটারটি যাতে নতুন করে চালু হয়। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।
দেশ বর্তমান/এআই