নারায়ণগঞ্জের ডিসি-এসপিকে শামীম ওসমানের হুঁশিয়ারি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : মাদক, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি বন্ধে করণীয় ঠিক করতে আয়োজিত নারায়ণগঞ্জের এক সভায় শামীম ওসমানের আমন্ত্রণে সাড়া দেননি নারায়ণগঞ্জ  জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। এতে ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্য। এতে রাজনৈতিক জীবনের ৪৫ বছরে কখনও এত বিব্রত হননি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যু ও কিশোর গ্যাং নির্মূলে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর এলাকায় একেএম সামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপেক্স স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।

নারায়ণগঞ্জের ডিসি-এসপির বিষয়ে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে প্রশ্ন তুলবেন বলে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, ‘ডিসি এসপি দাওয়াত গ্রহণ করেও কেন, কার ইশারায় মাদক, সন্ত্রাস বিরোধী এ সভায় আসেন নি, আপনারা আমাকে প্রশ্ন করেছেন। নারায়ণগঞ্জের প্রশাসনের একজনকেও যারা আজকে এখানে আসতে দেন নাই কিংবা আসেন নাই কেন, এ প্রশ্নের জবাব আমি নারায়ণগঞ্জে দিব না।’

রাগান্বিত হয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার সম্পর্কে আপনাদের ধারণা কম। জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে আমি শামীম ওসমান জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করব, জনগণের সেবক হিসেবে যারা জনগণের চাকরি করতে এ নারায়ণগঞ্জে এসেছেন আজকে তারা অনুপস্থিত কেন আমি জিজ্ঞাসা করব। আমি মাথা নোয়াবার মানুষ না। এমন কোনো কাজ করি না আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করব। আমি কথা বলতে চাই নাই। অনেকেই অনেক কিছু করেন, আমরা দেখি। নারায়ণগঞ্জের টাকা ধরা পড়ে যাত্রাবাড়িতে, আর কেইস দেখান ফতুল্লাতে। আমাদের কাছে অনেক খবর আসে। এ কথাগুলি আজকে বলার কথা না। এখানে যারা এসেছেন তারা সবাই হতাশ হয়ে গেছেন। কেউ হতাশ হবেন না। আমাদের নারায়ণগঞ্জ আমরাই ঠিক করবো।’
সমাজের অপরাধ নির্মূলে তার আহবানে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা সাড়া না দেয়ায় শামীম ওসমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আজকের এই সভায় সর্বস্তরের নেতারা এসেছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, আলেম ওলামা, সাংবাদিক, শিক্ষক সবাই এসেছেন। আমি সবাইকে দাওয়াত করেছি। আপনারা আমাকে প্রশ্ন করেছেন আমি জেলা প্রশাসককে বলেছি কিনা। আমি জেলা প্রশাসককে একবার বলি নাই। বারবার বলেছি। আমার মোবাইলে সব রেকর্ড আছে কাকে কীভাবে দাওয়াত দিয়েছি। খুব ভালোভাবেই তাদের দাওয়াত দিয়েছিলাম। আপনারা জেনে অবাক হবেন, জাতীয় সংসদের ক্যাবিনেট সেক্রেটারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সচিব, খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা আমাকে বলেছেন, আমার মতো উদ্যোগ সব জেলায় যদি নেয়া হয়, তাহলে আমরা একটা সুন্দর বাংলাদেশ পাব।’

এদিকে দুপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে মাদক, সন্ত্রাস, কিশোর গ্যাংসহ প্রধান সামাজিক সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের আহবানে সাড়া দিয়ে এ মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হন জেলার আলেম ওলামা, শিক্ষক, আইনজীবী, চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাসহ সব পেশাজীবী মানুষ।

তবে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা মতবিনিময় সভায় না আসায় বক্তারা হতাশা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিশেষ করে সবার ক্ষোভ প্রকাশ পায় ডিসি-এসপির বিষয়ে, যারা জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করেন। একই প্রশ্ন ওঠে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভীর ব্যাপারেও। কারণ তিনিও শামীম ওসমানের আমন্ত্রণে মতবিনিময় সভায় আসেননি।

এসময় মত বিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি চন্দন শীল, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল (ভিপি বাদল), মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, ইয়ান মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সভাপতি তানভীর আহম্মেদ টিটু, নারায়ণগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি আরিফ আলম দিপু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি ও নাসিক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, নাসিক ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ও থানা যুবলীগের সদস্য মানিক মাস্টার, বাংলাদেশ ট্যাংকলরী শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শ্রমিকলীগ নেতা আশরাফ উদ্দিন সহ বিভিন্ন শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদবৃন্দ।