ভারতের তিন মাস রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় দেশে আবারও অস্থির হয়ে পেঁয়াজের বাজার। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন, আমদানি ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও এক দিনের ব্যবধানে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৮০-৯০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে এক কেজি দেশি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাকে সর্বোচ্চ ২২০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা। পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে শুধু নিম্নবিত্ত নয়, সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের নাভিশ্বাস চরমে উঠবে।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়, তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করতে হয়। তবে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলেও বর্তমানে দেশের বাজারে প্রভাব পড়ার কোনো কারণ নেই। দেশে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ও আমদানি পর্যাপ্ত পরিমাণে হয়েছে। পাশাপাশি নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। ফলে এখন দাম বাড়া অযৌক্তিক।
ভারতে বৃষ্টি হলে বা আমদানি বন্ধ হলে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। এর পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত। অতি মুনাফালোভী পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মানুষকে জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘটনা নতুন নয়। এখন থেকে অবৈধ ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে হবে।
দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২৬-২৮ লাখ টন। চলতি বছর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। কিন্তু উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে বা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ৩০-৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। সে হিসাবে প্রকৃত উৎপাদন দাঁড়ায় ২২-২৪ লাখ টন। চাহিদার তুলনায় কম হলেও এ সময়ে পেঁয়াজের তেমন ঘাটতি নেই। তাহলে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া কিছুই না।
আমরা মনে করি, সিন্ডিকেট করে যারা পণ্যের দাম বাড়ায় তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে। এতে ভোক্তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করা উচিত এবং এই অভিযান সারা বছর অব্যাহত রাখা দরকার।
সর্বোপরি বলতে চাই, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কাজেই নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থিরতা দূর করার জন্য সময়মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। পেঁয়াজের বাজার নিয়ে দেশবাসীর তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য তথা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি ক্ষেত্রেই সিন্ডিকেটের আস্ফালন লক্ষণীয়। তবে এটা নতুন কিছু নয়, সাংঘর্ষিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা এ চক্রটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। এরা ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অনায়াসে অন্যায্যভাবে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে।
আমরা আরও মনে করি, বাজার পরিস্থিতি পাল্টানোর জন্য সবার আগে প্রয়োজন বিক্রেতাদের মানসিকতার পরিবর্তন। ক্রেতাদেরও সজাগ থাকতে হবে। এই পরিবর্তন কবে ঘটবে তার জন্য অপেক্ষা করে নিষ্ক্রিয় হয়ে বসে থাকলে চলবে না। এর জন্য রাষ্ট্র-সমাজের সচেতন দায়িত্বশীল মহলকে ভূমিকা রাখতে হবে।