সব ঠিক থাকলে আগামী বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর গণপরিবহনে নতুন দিগন্ত বহু প্রতিক্ষীত মেট্রোরেলের উত্তরা-আগারগাঁও অংশ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন থেকে যাত্রী নিয়ে ছুটবে স্বপ্নের মেট্রোরেল।
প্রাথমিকভাবে সীমিত পরিসরে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে ট্রেন, যার দূরত্ব ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। তবে বাকি সাতটি স্টেশন পর্যায়ক্রমে ধাপে ধাপে খোলা হবে। নিয়ম করে প্রতিদিন চার ঘণ্টা উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে ছুটবে মেট্রোরেল।
উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা মেট্রোরেলের দু’টি স্টেশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। উদ্বোধন উপলক্ষে নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় স্টেশনে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হবেন বলে জানা গেছে।
মেট্রোরেল নির্মাণে নিযুক্ত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানিয়েছে, প্রাথমিক পরিকল্পনায় দিনে সর্বোচ্চ চার ঘণ্টা ট্রেন চালানো হবে। প্রথমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও সরাসরি সার্ভিস দেবে এমআরটি সিক্স। আপাতত থামবে না আর কোনো স্টেশনে।
তবে প্রতি সাত বা দশদিন পরপর বদল হবে পরিকল্পনা। সবকিছু নির্ভর করবে যাত্রীর চাপ আর অভ্যস্ততার ওপর। তবে ২৬ মার্চ পূর্ণ অপারেশনে যেতে চায় কর্তৃপক্ষ। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, ১২টি ট্রেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে শুরুর দিকে পাঁচটি ট্রেনের বেশি প্রয়োজন হবে না। এজন্য পাঁচটি ট্রেন থাকবে। চলাচল শুরুর তিন মাস পর থেকে সব ট্রেন চলাচল শুরু করবে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথে মোট ৯টি স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- উত্তরা উত্তর (দিয়াবাড়ি), উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আগারগাঁও। উদ্বোধনের দিন শুরু ও শেষের স্টেশন দু’টি খুলে দেয়া হবে।
এদিকে সরকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া ঠিক করেছে ২০ টাকা। আর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেল যে অংশে চলাচল শুরু করবে, সেই উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের ভাড়া হবে ৬০ টাকা। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার (মধ্য) ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া একই ২০ টাকা। এ ছাড়া প্রথম স্টেশন (উত্তরা উত্তর) থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মেট্রোরেলের প্রতি ট্রেনে ছয়টি কোচ থাকছে। এর প্রতিটিতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ যাত্রী। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে ও দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন।
প্রতিটি ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। তবে ট্রেন কোন স্থানে কত গতিতে চলবে, সেটা ঠিক করবে কর্তৃপক্ষ।
ট্রেনের নকশা প্রণয়ন ও তৈরির কাজ করছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম।
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, মেট্রোরেলে চলাচলের জন্য তাৎক্ষণিক টিকেট সংগ্রহ করা ছাড়াও সাপ্তাহিক ও মাসিক পারিবারিক কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগে থেকে এসব কার্ড কিনতে হবে। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে থাকা যন্ত্রেও কার্ডে টাকা ভরা (রিচার্জ) যাবে। প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের সময় যাত্রীদের কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা নাহলে দরজা খুলবে না। এরপর নেমে যাওয়ার সময় আবার কার্ড পাঞ্চ করতে হবে, তা নাহলে যাত্রী বের হতে পারবেন না। আরেকটি কার্ড সাময়িক, যা প্রতি যাত্রায় দেয়া হবে। স্টেশন থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের ভাড়া দিয়ে এ কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। এটি স্মার্ট কার্ডের মতো।
স্টেশনে টিকেট বিক্রির দু’টি কাউন্টার থাকবে। এর একটিতে সাধারণ মানুষ টিকেট কিনতে পারবেন। অন্যটিতে কেনার সুযোগ পাবেন শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা।