ইট ব্যবহার করে সড়ক, মহাসড়ক এবং স্থাপনা নির্মাণের ফলে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। অন্যদিকে আবাদি জমি কেটে বা জমির টপ সয়েল কেটে ভাটাগুলো ইট তৈরীর ফলে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি কমে যাচ্ছে প্রতি বছর। এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সরকার ২০২৪ সালে মধ্যে গ্রামীণ সড়কে বিটুমিনাস কার্পেটিং এবং ইটের ব্যবহার না করে শতভাগে উন্নত করতে চায় পরিবেশবান্ধব ইউনিব্লকের ব্যবহার।
তারই ধারাবাহিকতায় সিরাজগঞ্জে প্রথমবারের মতো রায়গঞ্জ উপজেলার লবণকোটা হতে রানীজঙ্গল সড়কে বিটুমিনাস এবং সাধারণ ইটের সড়কের পরিবর্তে মোটা বালি, পাথর ও সিমেন্টে তৈরী পরিবেশবান্ধব ইউনিব্লক দিয়ে ২ কি:মি সড়ক তৈরি করেছে সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। পরিবেশবান্ধব এসব ইউনিব্লকের ব্যবহার বাড়লে ইটের ব্যবহার বন্ধ হবে এবং দেশের আবাদি জমি রক্ষা পাবে, পরিবেশ দূষণ কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, বর্তমানে বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে খরচ হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা। সেখানে ইউনিব্লক দিয়ে সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে ১৫-২০% বেশি খরচ হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও ইউনিব্লক সড়কের মেইটেন্যান্স খরচ বিটুমিনাস সড়কের চেয়ে ৩০-৪০% কম হবে।
সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার এই ধরনের ইট দিয়ে সড়ক এবং সরকারী বাসভবন নির্মাণের উপর জোর দিয়েছে। সে কারণে এবছর ১০ শতাংশ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে ইউনি ব্লক দিয়ে। সাধারণ ইটের চাপ নেয়ার ক্ষমতা ১৭ এমপিএ হলেও ইউনি ব্লকের ৩৫ এমপিএ চাপ নেয়ার ক্ষমতা আছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, বিটুমিনাস কার্পেটিং করতে পিচ পোড়াতে হয় ফলে পরিবেশেরে অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। তাছাড়া বর্ষায় বিটুমিনের কাজ করা যায়না। কিন্তু ইউনি ব্লক দিয়ে বর্ষায়ও কাজ করা যাচ্ছে। বৃষ্টিতে বা জলাবদ্ধতায় বিটুমিনের সড়ক নষ্ট হলেও ইউনি ব্লক দিয়ে তৈরী সড়ক নষ্ট হবেনা। ইউনি ব্লক দিয়ে সড়ক নির্মাণ বা সংস্কারের পদ্ধতিও অনেক সহজ।
নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি নগরায়ন, শিল্পায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আবাদযোগ্য জমি কমে যাচ্ছে। ইট তৈরীতে যেহেতু মাটি অথবা টপসয়েল ব্যবহার করছে ভাটাগুলো ফলে খাদ্য উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে ইট ভাটাগুলো জ্বালানি হিসাবে প্রচুর পরিমাণ কাঠ পোড়ায়। তাই ইটের ব্যবহার বন্ধ করতে ইউনি ব্লক দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা গেলে একদিকে যেমন আবাদি জমিকে রক্ষা করা যাবে, অন্যদিকে পরিবেশ দূষণ কমানো সম্ভব হবে।
এলাকাবাসীও খুশি এই রাস্তা নিয়ে। গ্রামের সামাদ,মতিন সহ অনেকে বলেন, এই সড়কে অন্যান্য সড়কের চাইতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম। ভেজা রাস্তায় গাড়ি চালালেও কোন স্লিপ করেনা কিন্তু বিটুমিনাস কার্পেটিং সড়কে স্লিপ করে অনেক দুর্ঘটনা হয়।লবণ কোটা গ্রামের এরাশাদ বলেন, তিনি জীবনে এমন সড়ক দেখেননি। সড়কটি দেখতে যেমনটা সুন্দর তেমনি মজবুত মনে হয়।
তবে একই গ্রামের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি কিছুটা অভিযোগ করে বলেন, রাস্তার কাজ খুবই ভাল হয়েছে। তবে সোল্ডারে ঠিকমতো মাটি না দেওয়ায় কোথাও কোথাও ভেঙ্গে ধ্বসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবিষয়ে এস,এস কনস্ট্রাকশনের ঠিকাদার বলেন, কাজটি নতুন হওয়ার ফলে তাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তবে ইউনি ব্লক সিরাজগঞ্জে স্থানীয়ভাবে তৈরী না হওয়ায় জেলার বাহির থেকে আনতে হয়েছে। ফলে কিছুটা ঝামেলা হয়েছে। যদি স্থানীয়ভাবে উৎপাদন এবং সরবরাহ করা যেত তবে ভাল হতো।ইউনি ব্লকের কাজ জীবনে প্রথম করলেও এই ধরনের পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণ করলে দেশের জন্য ভাল হবে বলে মনে করেন তিনি।